রুবলে দাম পরিশোধ না করলে পশ্চিমকে গ্যাস দেবে না রাশিয়া

0

বিশেষ সংবাদদাতা॥ ইউক্রেনে যুদ্ধের পাঁচ সপ্তাহ পর পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিলো রাশিয়া। যদিও প্রথম থেকেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এটি কার্যকর হলে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গ্যাসের দাম আকাশ ছুবে। এ নিয়ে একটি ডিক্রীতে স্বাক্ষর করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে এখন থেকে বিদেশী দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাস কিনতে হলে রুবলে তার দাম পরিশোধ করতে হবে। নইলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে রাশিয়া। এ খবর দিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট। শুক্রবার থেকেই কার্যকর হতে যাচ্ছে রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত। ফলে পশ্চিমা দেশগুলোকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগও দেয়া হয়নি।
পুতিন বলেন, কেউ আমাদের কাছে বিনামূল্যে কিছু বিক্রি করে না। আর আমরাও দয়া-দাক্ষিণ্য করতে যাচ্ছি না। রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে হলে অবশ্যই রাশিয়ার ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ১লা এপ্রিল থেকে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। কেউ এভাবে পেমেন্ট করতে ব্যর্থ হলে আমরা সেসব ক্রেতাকে খেলাপি বিবেচনা করব। খেলাপিদের ক্ষেত্রে বিধিমাফিক যা করা হয়, সে ব্যবস্থাই নেয়া হবে। যদিও আগামি মাসের জন্য গ্যাসের মূল্য এরইমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর। তাই রাতারাতি তারা কোনো সংকটে পড়বে না। তাছাড়া এই ডিক্রীর মাধ্যমে ইউরোকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিনা তাও স্পষ্ট করেনি রাশিয়া। ফ্রান্স ও জার্মানি যদিও পুতিনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে ‘ব্ল্যাকমেইল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লো মেয়াঘ বলেন, রাশিয়ার বেঁধে দেওয়া শর্ত ফ্রান্স ও জার্মানি গ্রহণ করবে না। আমরা জি৭-এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অন্য একটি মুদ্রায় গ্যাসের মূল্য পরিশোধের শর্ত আমরা মেনে নিব না। রাশিয়াকে অবশ্যই চুক্তি রক্ষা করতে হবে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, জার্মানি সম্ভবত এক বছরের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল ও কয়লা আমদানির উপর নির্ভরতার অবসান ঘটাবে, তবে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। তুরষ্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগুলু বলেছেন, তুরষ্ক সরকার নিজেদের মুদ্রা লিরায় রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে পারবে বলে মস্কোর কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন।
বিবিসির রিপোর্ট বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ৩০ শতাংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে। রাতারাতি এই উৎসের কোনো বিকল্পও তাদের নেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও জ্বালানী খাতকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। রুবলের মাধ্যমে গ্যাস ক্রয়ে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে পুতিন মূলত রুশ মুদ্রার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় এর দামের বড় ধরণের পতন হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭৮ রুবল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকলে রুবলের দরপতন হতে থাকে। ১লা মার্চ প্রতি ডলারে ১০৫ রুবল এবং ৮ই মার্চ প্রতি ডলারে ১৪৪ রুবল বিনিময় হয়। এরপর পুতিন নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে কেবলমাত্র রুবলে গ্যাসের মুল্য নেওয়া হবে মর্মে ঘোষণা দিলে মুদ্রাবাজারে রুবলের চাহিদা বেড়ে যায়। চড়তে থাকে রুবলের বিনিময় মূল্য। বৃহস্পতিবার নাগাদ প্রতি ডলার সমান হয় ৭৯ রুবল।