মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না মীম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও জেলায় জমি না থাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে এবার চাকরি পাচ্ছেন না খুলনার মীম আক্তার। খুলনায় স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। তবে পুলিশ সুপারের দাবি, মেডিক‌্যাল পরীক্ষায় মীমের দৃষ্টিশক্তিকে সমস‌্যা ধরা পড়েছে। এদিকে, লিখিত পরীক্ষায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকার পরও চাকরি না পেয়ে হতাশ মীম ও তার পরিবারের সদস্যরা। মীমের আবেদনপত্র সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকায় ভাড়া থাকেন মীম ও তার পরিবার। তার বাবার নাম মো. রবিউল ইসলাম। খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ভাড়ায় ছোট্ট একটি দোকান নিয়ে লেপ-তোশকের ব্যবসা করেন তিনি।
মীম আক্তার বলেন, ‘পুলিশের কনস্টেবল পদে ২৫ অক্টোবর খুলনা শিরোমনি পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর তিন দিন ধরে চলা শারীরিক যোগ্যতা যাচাইয়ে আমি উত্তীর্ণ হই। এরপর ২৮ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা হয় খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এতে উত্তীর্ণ হই। এরপর মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হই। ফলাফলে জানতে পারি আমি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছি। এরপর খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে সাধারণ মেডিক‌্যাল পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ১২ নভেম্বর রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখানে ১৩ নভেম্বর সকালে মেডিক‌্যাল পরীক্ষা হয়। তারপর বাড়িতে ফিরে আসি। সেখান থেকে বলা হয়েছিলো, পরবর্তীতে ফলাফল জানানো হবে। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ও সিটিএসবি থেকে বাড়িতে তদন্তে আসে। তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। তারা বলেছিলেন, ৫ ডিসেম্বর আমাকে জানাবেন। ফোন দিয়ে ৭ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ডাকা হয়। সেখানে পাঁচ আঙুলের ছাপ দিয়ে এসেছিলাম। সেখান থেকে বলেছিল, পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
মীম বলেন, ‘যারা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে এসেছিলো তাদের ফোন দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে কিছু না জানানোর কারণে আমি শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ লাইন্সে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসপি’র সঙ্গে কথা বলতে। এরপর শনিবার (১১ ডিসেম্বর) খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়েছি। পুলিশ সুপারকে পাইনি। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তোমার সব ঠিক আছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমার চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছি। ভূমিহীন বলে আমার চাকরি হবে না। আমার জন্ম খুলনায়। জন্মসনদও খুলনা সিটি করপোরেশনের।’ মীমের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৭ মাস ধরে ডা. বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করছি। ১৯৮৮ সাল থেকে এই এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে আছি। গত ৩২ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রয়েছি এখানে। মেয়ের জন্ম খুলনাতে। এখানে আমার নিজস্ব কোনো জমি নেই। এছাড়া, গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানাতেও আমার জমি নেই। আমার বাবা জীবিত আছেন। যে জায়গা-জমি আছে তা বাবার নামে। ভূমিহীন বলে আমার মেয়ের চাকরিটা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘মেয়ের কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ এসেছিলো। তাদের আমি সব ঘটনা খুলে বলেছি। তারপর তারা বলে গেছেন, স্থায়ী ঠিকানা বা জমি না থাকলে আপনার মেয়ের চাকরিটা সম্ভবত হবে না।’
খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘মেয়েটা সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে। তবুও পুলিশের রুলসের কারণে আমরা তাকে নিতে পারছি না। আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। এখন সরকার যদি আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করে তবেই চাকরি দেওয়া সম্ভব।’ খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘আমরাতো ভালো প্রার্থীকে চাই। চান্স পাওয়ার ৭/৮টি ধাপ রয়েছে। এসব ধাপে যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ ডিসচার্জ হয়ে যায়। ট্রেনিংয়ে যাওয়া পর্যন্ত যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ বাদ পড়তে পারে। প্রার্থী (মীম) স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে খুলনার। কিন্তু আমরা দেখলাম সেখানে তার কোনো ঠিকানা নেই। সেক্ষেত্রে সে তথ্য গোপন করেছে। আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে তার বাগেরহাটের ঠিকানা। তাহলে কেন সে বাগেরহাট থেকে আবেদন করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মীম কিন্তু মেডিক‌্যালে ফিট হয়নি। তার দৃষ্টিশক্তিও কম। চশমা ছাড়া কম দেখে সে। মেডিক‌্যালে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট হয়। আমাদের মেডিক‌্যাল বোর্ড রয়েছে, সেখান থেকে আমরা ফাইনাল ওপেনিয়ন যেটা পেয়েছি, সেখানে সে ফিট নয় বলে জানানো হয়েছে। তবে শেষ কথা হচ্ছে, একজন ভালো প্রার্থীর জন্য আমরাও বেশ চেষ্টা করি। ভালো প্রার্থী আমরা কেন নেব না?’
উল্লেখ‌্য, এর আগে বরিশালে নিজেদের জমি না থাকায় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পুলিশে চাকরি পাচ্ছিলেন না আসপিয়া ইসলাম কাজল নামে এক প্রার্থী। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরে আসে। এরপর তাকে জমি ও ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে দূর হয় পুলিশে চাকরি না পাওয়ার শঙ্কা।