প্রণোদনা ঋণ আদায় নিয়ে ভাবতে হবে

0

করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই বিশ্বব্যাপী আরো ভয়াবহরূপে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। অনেক দেশই আবার লকডাউনে চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলও ভেঙে পড়েছে। অনেক দেশই আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে। রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। উৎপাদন ও বিক্রি স্বাভাবিক না হওয়ায় ভারী শিল্পেও বেড়ে চলেছে লোকসান ও ব্যাংকঋণের বোঝা। তার পরও ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াইয়ে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে চালু রেখেছেন শিল্পের চাকা। কিন্তু জয়ের ব্যাপারে এখনো রয়ে গেছে অনিশ্চয়তা। প্রথম দফা সংক্রমণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি রায় সরকার এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। তদুপরি আগের নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ও ঋণের সুদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। এসব সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথাযথ পদপে। এসব নীতি সহায়তার কারণে ব্যবসায়ীরা তি কাটিয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে আবারও তারা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। দ্রুত কমছে উৎপাদনশীলতা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। অথচ করোনার দ্বিতীয় দফার প্রকোপ সেসব দেশেই সবচেয়ে বেশি। বছরব্যাপী এমন সংকটে সেসব দেশের অর্থনীতিরও বিপর্যস্ত অবস্থা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর ২০২০ সালে আবার সবচেয়ে বড় মন্দার কবলে পড়েছে বিশ্ব। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাকের খুচরা বিক্রি কমে গেছে। তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আগের ক্রয়াদেশও অনেকে স্থগিত বা বাতিল করছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের অবস্থাও ভালো নয়। মানুষের আয় ক্রমেই কমছে। একই সঙ্গে কমছে ক্রয়মতা। তার প্রভাব পড়েছে দেশীয় শিল্পোৎপাদনে। কিন্তু উৎপাদন কমলেও খরচ কমেনি। ফলে অনেক শিল্প-কারখানা টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। তার পরও লড়াই করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় প্রণোদনার ঋণের অর্থ চলতি মাস থেকেই ফেরত নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত এসেছে তা হবে আত্মঘাতী। এতে অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি পুরনো প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানো এবং ঋণের সুদ অন্ততপে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রণোদনা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ কমপে আরো এক বছর না বাড়ালে অনেকের পইে এই ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আমাদের বিশ্বাস, দেশের শিল্প খাত রায় ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার আগের মতোই নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা নিয়ে এগিয়ে আসবে। পাশাপাশি অতীতে ঋণ বিতরণে যেসব দুর্বলতা ছিল সেগুলো দূর করা হবে।