উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল

0

সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে, বাগেরহাটের উপকূলীয় মোরেলগঞ্জ উপজেলার মানুষ হুমকির মুখে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত খরা, লবণাক্ততা, ভাঙনের ফলে ১০ বছরে প্রায় ১০০ হেক্টর নদীতে বিলীন হয়েছে। অভিবাসন হয়েছে হাজার হাজার পরিবারের।
৪৩৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের, সুন্দরবনঘেঁষা নদী তীরবর্তী উপকূলীয় মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান কৃষি ও মৎস্য চাষ। খেটেখাওয়া মানুষ কৃষি নির্ভরশীলতায়ও ২৮ হাজার ৫১০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে এই বছরে ২৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ১৮ শতাংশ লবণাক্ততার কারণে একটিমাত্র ফসল উৎপাদন করতে পারছে। প্রতি বছর অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে আমন ফসলের বিঘাপ্রতি যে জমিতে ২০ থেকে ৩০ মণ ধান হতো, সেসব জমিতে ১০-১২ বছর ধরে কৃষক ধান পাচ্ছেন বিঘাপ্রতি মাত্র ৮-১০ মণ। চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়েছেন কৃষকরা। এক যুগেরও বেশি ধরে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
অব্যাহত নদীভাঙনে কমছে জমি, সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দে নতুন কার্পেটিং রাস্তা, ইট সোলিং রাস্তা, কালভার্ট, বসতবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে। অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া, খাউলিয়া, বারইখালী, সদর, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরণ, পুটিখালী, তেলিগাতী, হোগলাবুনিয়া ও মোরেলগঞ্জ শহরের ২০টি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত ভাঙনের মুখে। নদীতে প্রতি বছরই অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানগুছি নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো থেকে শহর ও অন্যত্র চলে গেছে তিন থেকে চার হাজার পরিবার। উপকূলীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পানিই জীবন’ প্রকল্পের ডরপ ও সুশীলন হেলভেটাস বাংলাদেশী অর্থায়নে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, হাইজিং, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ দিনের দাবি নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ, খাল ও নদীনালা সুরক্ষা, সুপেয় পানির পর্যাপ্ত পুকুর, সৌরচালিত পিএসএফ নির্মাণ, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাংক বরাদ্দসহ লবণ পানির প্রবেশমুখে স্লুইসগেট নির্মাণের।
এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে নদী শাসন, সুরক্ষা, স্থায়ী বেড়িবাঁধ, স্লুইস গেটের দাবি এলাকাবাসীর। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উন্নত দেশগুলোর ভারী শিল্পায়নে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। এ ক্ষতির অন্তরালে উন্নত বিশ্বের বর্জ্য। বায়ুদূষণের ফলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এসব ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী মানুষ ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করতে হবে। ঝুঁকির মুখে থাকা উপকূলীয় এ মানুষদের রক্ষা করতে হবে।