দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হোক

0

প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনার ওপর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেছার নির্যাতন ও ‘সাজানো’ মামলা দায়েরের ঘটনায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ নিয়ে এখন চলছে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড়। খুব স্বাভাবিকভাবেই ঝড়ের লক্ষ্য জেবুন্নেছার সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনার শুরু থেকেই ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য বিভাগের থলের বিড়াল যেন এবার আর আটকে রাখা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদ মাধ্যমে ভাসছে কর্মকর্তাদের দুর্নীতির নানা চিত্র। আমরা মনে করি, এসব অভিযোগ ও তথ্য তদন্ত করা জরুরি।
এটা সর্বজন স্বীকৃত যে রাষ্ট্র জনগণকে যেসব সেবা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে জরুরি একটি খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। অথচ অতি জরুরি এই খাতে অনিয়মের অন্ত নেই। দুর্নীতি একে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। শুধু সরকারি চিকিৎসাসেবাই নয়, গোটা স্বাস্থ্য খাতেই দেখা যায় অরাজকতার নানা চিত্র। করোনা মহামারির শুরুর আগে থেকেই স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। করোনাকালে মাস্ক ও পিপিই কেনাকাটায় দুর্নীতি, কোভিড-১৯ পরীক্ষার নামে জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে স্বাস্থ্য খাত। গত বছর দুদকের অনুসন্ধানেও উঠে আসে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়, এমন ১১টি খাতও তখন চিহ্নিত করে দুদক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এর মাধ্যমে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের একটি বড় অংশ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাড়ে তিনশ’ টাকার কম্বল কেনা হচ্ছে দুই হাজার ৪১৮ টাকায়। মেশিন, উপকরণ হাতে না পেয়েই কোটি কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। নিম্নমানের কিংবা ব্যবহারের অনুপযোগী উপকরণ কেনা, প্রয়োজন না থাকলেও যন্ত্রপাতি-উপকরণ কেনা, অনুমোদনহীন কেনাকাটাসহ বহু অনিয়মই হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে সাধারণ মানুষ।
এসব অনিয়মের পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে করোনার শুরুর দিকে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় বড় ধরনের যে কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এসেছে, তা থেকে দায় মুক্তি পেতে পথ খুঁজছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অনিয়মের কেনাকাটার ওই বিল পরিশোধে একটি চক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও খবরে প্রকাশ। দীর্ঘদিনে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির যে মহা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তা এত সহজে দূর করা যাবে না। তবে দুর্নীতির কেনাকাটায় দায়মুক্তি কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।