আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব, বাড়ছে গুপ্ত হামলা

0

 

বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামাত্রিক পীড়নের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় অল্প কিছু দিনের মধ্যে অজ্ঞাত ঘাতকের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন। এ সময় বহু নেতাকর্মী গুপ্ত হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনাও ঘটছে। আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে- গুপ্তঘাতকদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর উদ্যোগ নেই।
গত শুক্রবার রাতে নওগাঁ শহরে গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন বিএনপি নেতা কামাল আহমেদ। রাত ১০টায় মহাসড়কের ইয়াদ আলীর মোড়ে মোটরসাইকেলে বসে ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় হেলমেট পরা মুখোশধারী পাঁচ-ছয়জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর চড়াও হয়। দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত করে তাকে ফেলে রেখে যায়। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার গভীর রাতে যশোরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়। সিসি ক্যামেরার ভিডিও চিত্রে দেখা যায় মুখবাধা দুর্বৃত্তরা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও তার চাচার বাড়ি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু বোমা নিক্ষেপ করছে। একটি-দু’টি নয় ১৫’র অধিক বোমা বিষ্ফোরণ ঘটানো হয় বাড়ি ভিতরে ও প্রধান ফটকের সামনে। গভীর রাতে আকস্মিক এ বোমা হামলায় প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহরের কেন্দ্র স্থলের মহল্লা ঘোপ।
গুপ্তহত্যার সূচনা হয় রাজশাহী মেডিক্যালের এক ডাক্তারকে হত্যা করে। দায়িত্ব পালন শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে ঘাতকরা তাকে পথে হত্যা করে। একই দিন রাজশাহীতে আরো একজন চিকিৎসকও গুপ্তহত্যার শিকার হন। সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, আক্রান্তরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃৃক্ত। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে গুপ্ত হামলা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাটোরে প্রথম গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটে ১৬ অক্টোবর স্থানীয় জামায়াত নেতা আবু নাওশাদ ও নাসির উদ্দিনের ওপর। হেলমেট ও মুখোশ পরা পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত তাদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। জেলার নলডাঙ্গায় ২৫ অক্টোবর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফজলুর রহমানকে একইভাবে একদল মুখোশধারী এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। ৩০ অক্টোবর একই উপজেলায় মহিষভাঙ্গা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোশাররফকে মুখোশধারীরা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে স্থানীয় একটি বিলের মধ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হকিস্টিক ও রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে ফেলে রেখে যায়।
গত এক মাসে রাজশাহী ও নাটোরে ১৩টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনার মধ্যে মিল দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে। তারা মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে চড়ে আসছে এবং হেলমেট ও মুখোশ পরা। অস্ত্র হিসেবে রামদা, রড, হকিস্টিক- দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করছে। একই প্রকৃতিতে বিরোধীরা পুরো উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে গুপ্ত হামলার শিকার হচ্ছেন। পর্যবেক্ষণে মনে হয়, পরিকল্পনা করে একটি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে নৃশংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিরোধীরা দাবি করছেন, আন্দোলন দমাতে এ ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা- বেছে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত গুপ্ত হামলার একটি ঘটনাও তদন্ত করে খোলাসা করা হয়নি। অথচ অপরাধের মোটিফ স্পষ্ট ও পুনঃপুন সংঘটিত হচ্ছে।
নির্বাচন ঘিরে সামনেও গুপ্ত হামলার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। হতে পারে আশকারা পেয়ে সারা দেশে বিরোধীদের ওপর একই কায়দায় এসব হামলা। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত এই নৃশংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।