যশোরে বৃষ্টিতে রেণু ও পোনার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠছে

0

আকরামুজ্জামান ॥ মৌসুমের শেষ সময়ে এসে যশোরের মৎস্যপল্লীখ্যাত চাঁচড়ায় মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি বেড়েছে। গত তিন মাস ধরে এ অঞ্চলে অনেকটা বৃষ্টিহীনতার পাশাপাশি অতিমাত্রার তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে শোচণীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। প্রজনন মৌসুমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এ অঞ্চলের মাছ চাষি ও হ্যাচারি মালিকদের।
সোমবার সকাল ৭টার দিকে শহরের চাঁচড়া বাবলাতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গত কয়েক মাসের তুলনায় মাছের কেনাবেচা বেড়েছে। মাছ চাষিরা জানান, এ বছর মাছের প্রজনন মৌসুম অনেকটা অনাবৃষ্টিতে কেটেছে। তাই সময়মত তারা মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি করতে পারেননি। তাই গত দুদিন ধরে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে কিছুটা বেচাকেনা বেড়েছে। তবে বাইরের জেলা থেকে প্রত্যাশিত ক্রেতারা এখনও আসছে না।
চাঁচড়া বাবলাতলা পোনা বাজারে কথা হয়, রবিউল ইসলাম রবি নামে এক পোনা ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, এবছর এখনো পর্যন্ত প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিরামহীন বৃষ্টি হলেও যশোরাঞ্চলে সেই বৃষ্টির দেখা যাচ্ছে না। তবে গত দুদিন ধরে সামান্য যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পুকুর ও জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়া যাচ্ছে। এসব কারণে বাজারটিতে বেচাকেনা বাড়ছে। তবে পোনা কেনার জন্য যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন। দেশের প্রত্যন্ত জেলা থেকে এখনো পর্যাপ্ত ক্রেতারা আসছেন না বলে তিনি দাবি করেন।
একই কথা বলেন, আব্দুল কাদের নামে আরেকজন পোনা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এ বছর প্রচ- গরমের কারণে গত দুই মাসে রেণু ও পোনা উৎপাদন কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। রেণু ও পোনা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে তাপমাত্রা ৪২-৪৩ ডিগ্রির ওপরে বিরাজ করায় পোনা মরে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। তীব্র্র গরমে পানিতে মাছের ডিম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ স্থানে পুকুর ও জলাশয়ে পানি না থাকায় মাছ মরে যায়। ফলে গত এপ্রিলের শুরু থেকে রেণু ও পোনা বেচাকেনা ছিলো না বললে চলে। তবে এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
তবে পোনা বাজারে আসা ক্রেতারা দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। জেলার মনিরামপুর থেকে আসা ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিকেজি গ্লাসকার্প মাছের পোনা ৩শ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, ব্লাককার্প ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জাপানি কার্প ২৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব পোনা কেজিতে কোনটি ২শ পিস আবার কোনোটি ৮টা ১০ টাও হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এর আগে এমন দামে তারা কখনও মাছের পোনা কেনেননি। এখন বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।
তবে ক্রেতাদের দাম নিয়ে হতাশার বিষয়ে দ্বিমতপোষণ করেছেন জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান বলেন, এ বছর মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ, শ্রমিক খরচ যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় বাজারে পোনার দাম সঠিক আছে। তাছাড়া এসব পোনার অধিকাংশই গত বছরের। এসব মাছ অতিমাত্রার বর্ধণশীল। যে কারণে এর চাহিদাও বেশি।
ফিরোজ খান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত চার মাসে মৎস্য খাতে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হওয়ার মতো নয়। তারপরও শেষ সময়ে মৌসুমি বৃষ্টি পেয়ে আমরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
উল্লেখ্য, যশোরে সমিতিভুক্ত রেণু ও পোনা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে ৩৬টি। এর বাইরেও ১০-১৫টি আছে। এসব হ্যাচারিতে চলতি বছর দুই থেকে আড়াই লাখ কেজি রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু গরমের কারণে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ হয়নি। অথচ এ সময়ে অন্যান্য বছরে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি হয়েছে।