লুটেরা মাফিয়া চক্রের প্রধান আজকের প্রধানমন্ত্রী : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

0

মাসুদ রানা বাবু॥ যশোরে বিএনপির সমাবেশে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, লুটেরা চক্র, মাফিয়া চক্রের প্রধান আজকের প্রধানমন্ত্রী। আলী বাবা চল্লিশ চোরের গল্পও তাদের কাছে হার মানায়। দেশে অর্থনীতি বলে কোন নীতি নেই, এই সরকারের আছে শুধু দুর্নীতি। এই সরকার জনগণের মঙ্গল দূরে থাক, দেশকে রক্ষা করতে পারবে না। জনগণের হাতে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী একটি আড়ৎ দিয়েছেন। সেই আড়তে চোর, ডাকাত, খুন, গুম ধর্ষণকারীরা যায়। শূঁটকি মাছের যেমন বিড়াল পাহারাদার, তেমনি এই বাংলাদেশের পাহারাদার শেখ হাসিনা। আর মাঝে মধ্যে পিতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। আবার পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করেন।
গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবার জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল(মুন্সি মেহেরুল্লাহ) ময়দানে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
বেলা ৩ টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা বেগম ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ লেখা সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড সহকারে খন্ড খন্ড সুজ্জিত মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সমাবেশ শুরুর আগেই দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে গোটা টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের শুরুতে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। এ সময় মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত এবং গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করা হয়।
সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের একটি ধর্ম আছে, কিন্তু শেখ হাসিনার কোন ধর্ম নেই। বাংলাদেশের মাফিয়ারা আজ পার্লামেন্টে, সেখানে কোন রাজনীতিবিদ নেই। আছে চোর, ডাকাত মাফিয়া চক্র। এই মাফিয়া কিভাবে সৃষ্টি হলো? কারা মাফিয়াদের সৃষ্টি করলো? এই মাফিয়া শুধু সাধারণ জায়গা না, প্রশাসনের মধ্যে মাফিয়া আছে। পত্র-পত্রিকায় বেনজীর, আজিজদের সম্পদ দেখছেন না! কত বড় মাফিয়া হলে চাকরি জীবনে তারা শত শত না, হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন? দেশে বেনজীর, আজিজ ঘরে ঘরে হাজার হাজার তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কী কারণে জেলে যাবেন? তার অপরাধ কী? যারা শেখ হাসিনাকে শক্তি দেয়, যারা তাকে বারংবার বিনা ভোটে নির্বাচিত দেখায়, তাদের সন্তুষ্ট করার জন্যে শেখ হাসিনা অপেক্ষা করছেন খালেদা জিয়া কবে মারা যাবেন। গেল ২৫ তারিখ সরকারের ইন্ধনে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়াকে হাসাপাতালে নেওয়ার জন্যে অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি। সেদিন দেশের সকল পুলিশ ইউনিটকে সজাগ থাকার জন্যে বলা হয়েছিল। আজরাইলের দায়িত্বটা শেখ হাসিনা পালন করতে পারলেন না, আল্লাহর রহমতে বেগম খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন। কারণ আল্লাহ শেখ হাসিনাকে সে সুযোগটা দেননি। বেগম খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন বলে আমরা সাহস পাই। এখনো লড়াই করার মতো শক্তি পাই। অনিয়ম করে সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে, গণগন্ত্র ও জনগণের মুক্তি হবে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবে।
তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বাঁচকে কীভাবে? যারা কর্ম করে খায়, তাদের কর্মসংস্থান কোথায়? তাদের আয় বাড়ছে? তারা তো সরকারি চাকরি করে না। সরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়ছে। সরকারি চাকররজীবীরা জনগণের সেবক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন- ভাতা হয়। কিন্তু আজ চাকরিজীবীরা দেশের মালিক আর জনগণ সবচেয়ে অসহায়। শেখ হাসিনার সাথে ভারতের —সম্পর্ক। পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশকে আরেকটি দেশ তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবে-আমরা বসে আঙ্গুল চুষবো না।
সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনা হয়। সেই অস্ত্র দিয়ে যদি নিজের দেশকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনবো কেন? কী কারণে আজ মিয়ানমার লাফালাফি করছে? কই শহীদ জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার সময়তো লাফালাফি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা -হামলায় কখনো কাবু হয় না। সেই দলের নেতাকর্মীদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ বিএনপি জনগণের দল, এই দল দেশ ও জনগণের কথা বলে। এই দল স্বাধীনতা -সার্বভৌমত্ব, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা বলে। সেই দলের নাম -নিশানা মুছে ফেলা সম্ভব না। আমরা টিকে আছি, টিকে থাকবো। আমরাই পেরেছি ১৯৭১ সালে, আমরাই পারবো দেশের গণতন্ত্র মুক্ত করতে। আমরাই পারবো দেশের মানুষকে মুক্ত করতে, আমরাই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। আমরাই দেশের স্বাধীনতা -সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবো। আমরাই দেশের স্বাধীনতা -সার্বভৌমত্ব বিরোধীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করবো।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে যশোরবাসী জালিম সরকারকে দেখিয়ে দিলো তারা বেশিদিন দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। বেগম জিয়ার জিয়া মুক্ত হবেন, গণতন্ত্র মুক্ত হবে। বেগম জিয়া জেল থেকে বের হবেন, বাংলাদেশে সত্যিকারের নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগে দুইটা আসন পায় কিনা সন্দেহ আছে। এবার গোপালগহেঞ্জ তিনি ( প্রধানমন্ত্রী ) হেরে যাবেন। আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে পরাজিত করবোই ইনশাল্লাহ।
অপর বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা তার অবৈধ শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করেন। বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে আপনি ( প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ) ফ্যাসিবাদ কায়েম করে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। দেশের জনগণ কখনো আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে মাথানত করবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মিছিল হবে, শেখ হাসিনার পতনের মিছিল।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মো. ইসহক, আবদুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান খান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারাজি মতিয়ার রহমান, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহি টিপু, শার্শা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা মহিলাদলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন টেনিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।