যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবার দৈন্যদশা

0

বিএম আসাদ ॥ সরকারি অফিস সময় শেষ হওয়ার পর রোগীরা যখন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের চিকিৎসা পান না তখন শুরু হয় হাসপাতালে চিকিৎসা সংকট। আর এ সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য সরকারি হাসপাতালে কম টাকার বিনিময়ে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হলেও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে তা ফলপ্রসু হচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে বৈকালিক চিকিৎসা সেবা অকার্যকর হয়ে উঠছে।
২০২৩ সালে সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। যারা বেসরকরি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অতিরিক্ত ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না তাদের জন্য বৈকালিক স্ব্স্থ্যাসেবা চালু করা হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে পড়ে এ চিকিৎসা ব্যবস্থা এগুচ্ছে না। যশোর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক কেউ-ই বৈকালিক চিকিৎসা সেবায় চেম্বারে বসেন না। এ কারণে রোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
শুরুর দিকে প্রায় ৬০ জনের মতো প্রতিদিন রোগী ৩শ টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা নেই। এখন বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী কমে যাচ্ছে। কোনদিন ৯ জন, কোনদিন ২০ জন রোগী আসছেন। এ অবস্থার মধ্যে ঢিলেতালে চলছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা।
চলতি বছরের জানুয়ারি হতে মে পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২ হাজার ৩শ ৫২জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন গত ৫ মাসে। এসব রোগীর ৩শ টাকা কনসালটেশন ফি হিসেবে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩শ টাকা আয় হয়েছে। এ ভেতর ১শ ৫৩ জনকে মাইনর অপারেশন করে ৪৫ হাজার ৯শ টাকা, ২ হাজার ৬শ ৫৯ জনকে প্যাথলজি পরীক্ষা বাবদ ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ ১৬ টাকা ও ৮শ ৬৮ জনকে এক্স-রে বাবদ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮শ টাকা আয় হয়েছে। সব মিলে সর্বমোট ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৮শ ১৬ টাকা সরকারের আয় হয়েছে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে।
এর আগে ২০২৩ সালে জুন হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে আয় হয়েছিল ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ ২৭ টাকা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যশোর মেডিকেল কলেজে এক এক বিভাগে একাধিক চিকিৎসক রয়েছেন। তারা অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ডিগ্রি ধারী। সরকারের কাছ থেকে তারা যে যত পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের তত বেড়েছে চেম্বারে রোগীর ফি। কিন্তু এ সকল ডিগ্রিধারী কোন চিকিৎসকই বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় চেম্বার করেন না। তারা চেম্বার করেন প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে। রোগীর কাছ থেকে তারা ফি নেন ৬শ টাকা থেকে ৭শ টাকা করে।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ভাল এগুচ্ছে না। প্রথমত মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক কিংবা সহকারী অধ্যাপকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালের চেম্বারে বসার অনুমতি দেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত হাসপাতালে যে সব এফসিপিএস ডিগ্রিধারী জুনিয়র কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার, রেজিস্টার আছেন, তাদের চেম্বারে বসিয়ে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখা হয়েছে। তারা বাইরে পরিচিত না হওয়ায় রোগীরা তাদের প্রতি আগ্রহী নন। যে কারণে সরকারের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় এ ধরনের দৈন্যদশার সৃষ্টি হয়েছে। তাও আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে ডা. হারুন-অর-রশীদ বলেন, যে হাসপাতালে একই বিভাগে একাধিক চিকিৎসক আছেন, সেখানে দুই শিফটে হাসপাতাল চালানোর নিয়ম করলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভাল হতো।