বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির জনস্রোত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বুধবার যশোর টাউন হল ময়দানে বিএনপি বিশাল সমাবেশ করেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে সমবেত হন।
বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই টাউন হল ময়দানে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। টাউন হল ময়দানের আশপাশের এলাকাজুড়ে সব সড়কে শুধু মানুষ আর মানুষ। নির্ধারিত সময়ের আগেই মঞ্চে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো এলাকা। এরই মধ্যে তিনটার কিছু পর আকাশ থেকে নেমে আসে বৃষ্টি। সবার লক্ষ্য মঞ্চের দিকে। বৈরী আবহাওয়ায় ত্যাগী অনুগত নেতাকর্মীরা কেউ পিছু হটেননি। সমাবেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা গতি ধরে রাখেন পুরোটা সময়।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাঠের আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিগত একদলীয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আহ্বান করা হয়। যশোর জেলা বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত এ সমাবেশ সফলে দলটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মহাসমাবেশে রূপ নেয়। সাধারণ মানুষের ভাষ্যমতে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে বিএনপির এমন ব্যাপক উপস্থিতি সুশৃঙ্খল সমাবেশ নিকট-অতীত দেখা যায়নি।
দুপুরের পর থেকে যশোর শহর ও আশপাশের উপজেলা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন টাউন হল ময়দানে। বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তারা। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নির্ধারিত সময়েই মঞ্চে উপস্থিত হন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায়সহ অন্যান্য অতিথিরা। সকাল থেকে দফায় দফায় মাঠে তদারকি করতে থাকেন দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশের মূল পর্ব। সেসময় আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরতে থাকে। এ সময় মাঠে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে মাঠের বাইরে সড়ক ও তার আশপাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে থাকেন। এ সময় মঞ্চ থেকে নেতাদের একের পর এক জ¦ালাময়ী ভাষণে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। নেতাকর্মীদের বিপুল এ উপস্থিতি দেখে মঞ্চে বসে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা যারপরনায় খুশি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সেই দুপুর থেকে মাঠে বসে আছেন। আমরা সার্থক, গর্বিত। এই পরিস্থিতি থেকে সহজে অনুমেয় আমাদের নেতাকর্মীরা কতটা অনুগত ও ত্যাগী। তিনি বলেন, সরকার গত ১৫ বছর ধরে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছে সেটি আজ বুমেরাং হচ্ছে। আজকের এ সুশৃঙ্খল সমাবেশ তার বড় প্রমাণ।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আজকের সমাবেশে নেতাকর্মীদের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে যশোর হচ্ছে বিএনপির জন্য শক্ত ঘাঁটি। তিনি বলেন, সমাবেশে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। কারণ মানুষ আর এ সরকারকে এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চান না।
মনছুর আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, তিনি জেলার মনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা। শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে বিকেলে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এদেশ চলবে না। তাই ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে সমাবেশে এসেছেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টি যতই আসুক সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বেন না বলে জানান।
শার্শার ডিহি থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন আব্দুল মান্নান নামে এক বিএনপি কর্মী। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছি। জনগণকে মুক্তি দিতে হলে গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো কিকল্প নেই। এজন্য সেই দুপুর থেকে মাঠে ভিজে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা শেখ হাসিনার পতন ছাড়া মাঠ ছাড়বো না।