মাদক সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

0

 

২০১৭ সালে বিশ্বে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় কারণ মাদকে। এর চেয়ে অনেক বেশি মাদকাসক্ত নানা ধরনের অসুস্থতা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাতেন। ২০১৯ সালে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়, ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মাদকপাচারের প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক রুটের একটি রয়েছে বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশেও মাদকের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে।
এর কিছু প্রমাণও পাওয়া যায় প্রতিনিয়ত। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০২১ সালে সব সংস্থা মিলে তিন কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ইয়াবা জব্দ করে। ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয় ১০ লাখ আট হাজার বোতল। প্রায় চার কেজি কোকেন ও ২১০ কেজি হেরোইন জব্দ করা হয়। মাদকসংক্রান্ত ৪৭ শতাংশ মামলায় অপরাধীর সাজা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে সক্রিয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাদক কারবারিকে তারা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীতে অন্তত তিন শতাধিক স্পটে নিয়মিত অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক কারবার চলছে। একটি পত্রিকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ আবার যৌন অপরাধী। জেলখানায় যত মানুষ আছে এর বেশির ভাগই মাদক পাচারকারী কিংবা কারবারি। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, নতুন নতুন মাদকও আসছে নানা পথে। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসে ক্ষতিকর মাদক লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড। সংক্ষেপে মাদকটি এলএসডি নামে পরিচিতি। এলএসডি সাইকাডেলিক মাদক হিসেবে চিহ্নিত। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মাদক কারবারিরা এর নাম দিয়েছে ‘ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের শ্বাস’। মূলত ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে এই মাদক শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সাসহ জিনিসপত্র মাদক কারবারিরা ছিনিয়ে নেয়। একই কাজে যানবাহনে অজ্ঞান পার্টির যে লিকিউড ব্যবহার করে তাও মাদক দিয়ে তৈরি। এর মাত্রা একু বেশি হলেই মানুষের মৃত্যু ঘটে।
দেশে মাদকের অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে এক ভয়ংকর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। যেকোনো মূল্যে মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে। মূল কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আবারও গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। খেলার মাঠের মতো পর্যায়ে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করলে অনেকটা উপকৃত হওয়া সম্ভব। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাদক সংম্লিষ্ট সবার শাস্তি নিশ্চিত করা।