দুর্নীতি উন্নয়ন লুটপাটের প্রমাণ

0

গত সপ্তাহে ঢাকার একটি শীর্ষ দৈনিকে ভয়াবহ দুর্নীতির পৃথক তিনটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এগুলো হলো গাজীপুর জেলায় মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, ভোলা সদর উপজেলায় খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রণ ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্প, আইবিআরপির অধীনে পটুয়াখালীতে ১৩টি সেতু নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ।
পত্রিকাটি লিখেছে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও দেশের বহু মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন এটি অত্যন্ত লজ্জাকর। সেই লজ্জা ঘোচাতেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, এ দেশে আর কেউ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই মহতী উদ্যোগে বাদ সাধে কিছু মানুষের লোভী ও অনৈতিক মানসিকতা। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন এবং মহানগরীর কাশিমপুরে ১৬০টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিমে চারটি করে রড দেওয়ার কথা থাকলেও কোনোটিতে দেওয়া হয়েছে একটি, কোনোটিতে রডই দেওয়া হয়নি। কলাম পিলারে ১৬ মিলিমিটারের চারটি রড দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ১০ মিলিমিটারের দুটি রড। জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা প্লেনশিট। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঘরগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি এস এম সাদিক তানভীর জানিয়েছেন, ভেঙে ফেলা ঘরগুলো মানসম্মত উপকরণ দিয়ে আবার তৈরি করা হবে। এর আগেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কুমাইরা খাল খননেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছে, প্রস্থ ও গভীরতা ঠিক না রেখে যেভাবে খাল খনন করা হচ্ছে তাতে এটি কোনো কাজেই আসবে না। পটুয়াখালীতে আইবিআরপির অধীনে স্থানীয় এলজিইডি যেসব জায়গায় ১৩টি সেতু নির্মাণ করছে, সেখানে আগে আয়রণ ব্রিজ বা লোহার পুল ছিল না। ১৩টির মধ্যে ১২টি সেতুর ঠিকাদারি পেয়েছেন পৌর মেয়র ও তাঁর ভাই। এমন জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। আবার আড়াই কিলোমিটার সড়কে সেতুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়টি। অভিযোগ আছে, কাজ শুরু না করেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক জাানিয়েছেন, অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাস্তবতা হচ্ছে- সারা দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে আরো বেশি প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি এত বেশি অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে প্রকল্প গ্রহণের সার্থকতা কোথায়? আমরা মনে করি, প্রতিটি অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, উন্নয়নের প্রথম শর্ত দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়ন। এ কাজে ব্যর্থ হলে প্রকল্প উন্নয়নের নয় লুটপাটের প্রমাণ দেবে।