প্রতিবন্ধীদের বিমা চালু হচ্ছে রোববার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলায় অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের (এনডিডি) বিমা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্ত (এমওইউ) সই হবে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে এই বিমা পরিকল্পটি।
অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের বিমার আওতায় আনতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই বিমা পরিকল্পটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং সাধারণ বিমা করপোরেশনকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে বিমা পরিকল্পটি চালু করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
অবশ্য সব বাধা পেরিয়ে এখন পরিকল্পটি আলোর মুখ দেখছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ নামে চালু করা হবে এই বিমা পরিকল্প। এ উপলক্ষে আয়োজিত সমঝোতা চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। আইডিআরএ কার্যালয়ে দুপুর ১২টায় এ সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এনডিডি স্বাস্থ্যবিমা পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য চালু করা হবে। এই বিমার পলিসি ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে সাধারণ বিমা করপোরেশন। দাবি উত্থাপাতি হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে সাধারণ বিমা করপোরেশন বিমা দাবির অর্থ সরাসরি বিমাগ্রহীতাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে পাঠাবে।
কোনো কারণে মোট বিমা দাবির পরিমাণ মোট প্রিমিয়াম আয়ের থেকে বেশি হলে বা অতিক্রম করলে সাধারণ বিমা করপোরেশন মোট প্রিমিয়ামের ১১০ শতাংশ ঝুঁকি গ্রহণ করবে। একইভাবে যদি মোট দাবির পরিমাণ মোট প্রিমিয়াম আয়ের থেকে কম হয়, তাহলে সাধারণ বিমা করপোরেশন লভ্যাংশ থেকে প্রশাসনিক খরচ বাবদ ১৫ শতাংশ রেখে বাকি ৮৫ শতাংশ এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টকে ফেরত দেবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, সাধারণ বিমা করপোরেশন, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের সমন্বয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো এবং সিলেটের কয়েকটি এলাকায় বিমা পরিকল্পটি চালু হবে। পরবর্তীতে এ পরিকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে এমন এলাকায় এটি প্রসার করা হবে।
এনডিডি স্বাস্থ্যবিমার আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে তিন থেকে ২৫ বছর বয়সী সব বিমা গ্রাহকদের (নিউরো-ডেভলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী) জন্য একই প্রিমিয়াম হার ব্যবহার করা হবে। তবে বিমার আওতা বাড়ানোর জন্য বয়সসীমা শিথিল করা যাবে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও সেরিব্রাল পালসি এই চার ধরনের নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একই ধরনের বিমা সুবিধা দেওয়া হবে।
নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স-পূর্ব কোনো ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এ স্বাস্থ্যবিমার আওতাভুক্ত হবেন। এনডিডি স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে বিমাগ্রহীতার যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের ওপিডি চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। নির্ধারিত সীমার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির পূর্ব ও পরবর্তী ব্যয় সর্বোচ্চ বিমা অঙ্ক পরিমাণ বিমা দাবি পরিশোধ করা হবে।
সূত্র জানায়, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের অনুকূলে বিমা পলিসি ইস্যু করার জন্য এনডিডি ট্রাস্ট গ্রাহকের (এনডিডির আইন সম্মত অভিভাবক) কাছ থেকে লিখিত সম্মতি নিশ্চিত করার পর যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করবে। এছাড়া একটি এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রস্তুত করবে। সে মোতাবেক সাধারণ বিমা করপোরেশনকে তথ্য সরবরাহ করবে। বিমা গ্রহীতার কেওয়াইসি এনডিডি ট্রাস্ট থেকে সাধারণ বীমা করপোরেশনকে দিতে হবে। যা যাচাই-বাছাই করার পর চূড়ান্ত দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিমাকারী (সাধারণ বিমা করপোরেশন) এটিকে বিমা কভারের প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করবে।
প্রত্যেক বিমাগ্রহীতাকে তালিকাভুক্তি বা রেজিস্ট্রি করার জন্য অনুমোদিত বা রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানকে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট থেকে ২৫ টাকা করে দেওয়া হবে। প্রিমিয়াম সংগ্রহ বা আদায়ের জন্য অনুমোদিত রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি প্রিমিয়ামের আয় থেকে ৪০ টাকা করে সম্মানি দেওয়া হবে।
সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ, এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ নন-লাইফের আরও একটি বা দুটি কোম্পানির প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি ‘বাস্তবায়ন ও তদারকি’ কমিটি থাকবে। এই কমিটি সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী প্রস্তাবিত এনডিডি স্বাস্থ্যবিমার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুপারিশ বা পরামর্শ দেবে।