নিষেধাজ্ঞার পরও সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাবা, দেশে ফেরার নির্দেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয় নাগরিক ও মা সাদিকা সাঈদের কাছ থেকে দুই বছর আট মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া বাংলাদেশি বাবাকে দেশে ফিরে আসতে বলেছেন হাইকোর্ট। দেশে আসার পর শিশুসহ আগামী ১৪ ডিসেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিশুর দাদা টি আই এম নবীরকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। আইনজীবী নিজেই আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিমকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। অন্যদিকে বাবার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। ভারতীয় মা সাদিকা সাঈদের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই বাবাকে তলব করেছিলেন। কিন্তু তলবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বর বাবা সানিউর টি আই এম নবী হাজির না হওয়ায় গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান আদালতকে এ বিষয়টি অবহিত করেন। ওই তলবে শিশুর দাদা টি আই এম নবী আজ আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তার উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে এই আদেশ দেন আদালত। রিটের শুনানিতে গত ২৩ নভেম্বর আদালত শিশুর দাদাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাকে আজ ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে সশরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানির জন্যে উঠে। ওই দিন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও আদালতে হাজির করার আদেশের আগেই তিন বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন বাবা সানিউর টি আই এম নবী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ওইদিন জানান, ১৬ নভেম্বর বিকেলে ওই শিশুসহ বাবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিন সকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে শিশুকে নিয়ে বাবা অস্ট্রেলিয়া চলে যান। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দম্পতির শিশুসন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। ওই আদেশে গুলশান থানায় শিশুটির মায়ের পাসপোর্ট জমা রাখা এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বলেছিলেন আদালত। গত ৩০ আগস্ট ওই শিশুকে পরদিন ৩১ আগস্ট সকালের মধ্যে মায়ের আইনজীবীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া বলেছিলেন, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন ওই দম্পতি। তিনি জানান এরই মধ্যে ওই দম্পতির কোলজুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। তবে সুখের সংসারে তাদের একপর্যায়ে অশান্তি নামে। সাদিকাকে মারধর করেন স্বামী। ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে থাকা সাদিকার আত্মীয়-স্বজন জানতে পারেন। এরপর সে দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও কোনো সমাধান না পাওয়ায় পরে তার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।