লিচু খাওয়াতে নিয়ে শিশুহত্যা: ৭ আসামির খালাস স্থগিত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে লিচু খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার খেরুয়াজানি গ্রামের শিশু ফরহাদকে (৮) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলায় ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে হাইকোর্ট এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামিকে খালাস দেন। হাইকোর্ট থেকে সাত আসামিকে খালাস করে দেওয়া রায় আট সপ্তাহের জন্যে স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ নিজে। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তিনি জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও জুয়া খেলাসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আট বছরের শিশু হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম। সেটি আজ চেম্বার আদালতে শুনানি শেষে হাইকোর্টের খালাসের রায় আট সপ্তাহের জন্যে স্থগিত করেছেন। এরপরে হাইকোর্টের রায় প্রকাশ করা হলে সেটি নিয়ে আমরা নিয়মিত আপিল আবেদন করবো।
২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি গ্রামের শিশু ফরহাদ (৮) হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও অন্য একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক জহিরুল কবির এ রায় ঘোষণা করেছিলেন।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মুক্তাগাছা উপজেলার ১০ নম্বর খেরুয়াজানি ইউনিয়নের খেরুয়াজানি গ্রামের সাহেব আলী (৩৫), আব্দুল কুদ্দুস (৬০), ইব্রাহিম (৫৫), আব্দুল মজিদ মধু (৭০), মোন্তাজ আলী (৬০) ও জুয়েল (৩৫)। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম কমলা খাতুন (৫০)। পরে ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আসামিরা আপিল আবেদন করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে চলতি বছরের ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর আসামিদের খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি গ্রামের আইয়ুব আলীর সঙ্গে প্রতিবেশী সাহেব আলী, আবদুল কুদ্দুছসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামিদের জমি-জমা, জুয়া খেলা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে ২০১০ সালের ৪ মে আইয়ুব আলীর ছেলে শিশু ফরহাদকে হত্যা করেন তার প্রতিপক্ষের লোকজন। ফরহাদ খেরুয়াজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ফরহাদকে লিচু খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আসামি কুদ্দুছ। পরে ফরহাদকে দুই হাত কেটে ও কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ কাঠের বাক্সে ঢুকিয়ে বাড়ির পাশে জলাশয়ে ফেলে রাখা হয়। এরপর বহু খোঁজাখুঁজি করেও ফরহাদকে পায়নি তার পরিবার। দুদিন পর মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়ালে এলাকাবাসী ওই জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয়। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইয়ুব আলী বাদী হয়ে ওই বছরই ৬ মে মুক্তাগাছায় থানায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেন। তদন্তে ছয় আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে সাতজন আসামির বিরুদ্ধে পরের বছর ২০১১ সালের মার্চে মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। এরপর সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ময়মনসিংহের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক জহিরুল ইসলাম কবির রায় ঘোষণা করেন।