কারাবন্দি থেকেও ভাঙচুর-মারধর মামলার আসামি

0

মিজানুর রহমান॥ চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ২০১৯ সালের ২০ জুন রাশেদুল ইসলাম বাবু (২৭) ও সুজন গাজী (৩৫) নামে দুজনকে কারাগারে পাঠান আদালত। সে মামলায় রাশেদুল ওই বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং সুজন ২৫ জুলাই পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। কিন্তু কারাগারে থাকার সময়েই ৮ এবং ১০ জুলাই দুটি ঘটনায় মো. আলফাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বসতবাড়িতে ভাঙচুর, চুরি, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি মামলা হয়েছে। আর সেই মামলায় অন্য আসামিদের পাশাপাশি রাশেদুল-সুজনের বিরুদ্ধেও আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় চলছে। যদিও পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আমাকে আমার ভাই আবুল কালাম হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আসামি আলফাজ উদ্দিন ও তার ছেলেরা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের মামলা দায়ের করেন। যেটি ডিবির তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হলেও পিবিআই কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে নালিশি মামলায় পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন, সে মামলার প্রধান আসামি একটি হত্যা মামলার বাদী। নালিশি মামলার আরও তিন আসামি ওই হত্যা মামলার সাক্ষী। নালিশি মামলার আসামিপক্ষের অভিযোগ, হত্যা মামলার সমঝোতা করতে চাপের অংশ হিসেবে পাল্টা নালিশি মামলাটি করা হয়। আর পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এক রকমের ‘প্রভাবে’ তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। আদালত সূত্রে জানা যায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় মারামারির একটি মামলায় (১৩৮/১৯) ২০১৯ সালের ২০ জুন রাশেদুল ও সুজনকে কারাগারে পাঠান আদালত। মামলার আদেশ সূত্রে জানা যায়, সে বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত রাশেদ এবং ২৫ জুলাই পর্যন্ত সুজন কারাগারে ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল মো. আলফাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাশেদুল, সুজনসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে নালিশি মামলা (সিআর ১৮২/২০) দায়ের করেন। মামলায় ২০১৯ সালের ৮ এবং ১০ জুলাইয়ের দুটি ঘটনায় বসতবাড়িতে ভাঙচুর, চুরি, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ করা হয়। অর্থাৎ যে সময় রাশেদুল-সুজন কারাগারে ছিলেন, সেসময়ই তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, চুরি, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ করা হয় মামলায়। মামলাটি দায়েরের পর আদালত তা আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম নগর উত্তর জোনের গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের আদেশ দেন। আদালতের আদেশে ডিবি উত্তর জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান কায়কোবাদ মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি জানতে পারেন, ওই নালিশি মামলার বাদী আরেকটি হত্যা মামলার আসামি। আর হত্যা মামলার বাদীকে করা হয়েছে নালিশি মামলার প্রধান আসামি। তদন্তে নালিশি মামলাটির অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট সব আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা। পিবিআইয়ের কর্মকর্তা যে মামলার প্রতিবেদন দিয়েছেন, ওই মামলার বাদী আলফাজ উদ্দিন ব্যবসায়ী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি। তিনি হত্যা মামলাটি আমাকে আপস করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আপস না করায় হত্যা মামলার বাদী ও কালামের ছোট ভাই সৌরভকে আসামি করে ঘটনার ১০ মাস পর আদালতে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চাঁদাবাজির ঘটনা দেখানো হয়েছে আবুল কালাম হত্যাকাণ্ডের দিন। ওইদিন সৌরভসহ আমরা সবাই কালামের জানাজা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এছাড়া ভাঙচুর-চাঁদাবাজি মামলার দুই আসামি ঘটনার সময়ে আরেক মামলায় কারাগারেই ছিলেন। ভাঙচুর-চাঁদাবাজি মামলার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখানো এক সাক্ষীও ঘটনার সময়ে কারাগারে ছিলেন কিন্তু ডিবির এ তদন্ত প্রতিবেদনে আদালতে নারাজি দেন নালিশি মামলার বাদী আলফাজ উদ্দিন৷ এরপর আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা মামলাটির তদন্তভার নেন। এ বছরের ২৬ এপ্রিল তিনি মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। প্রতিবেদনে তিনি বসতবাড়িতে ভাঙচুর, চুরি, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে মোট ১৪ জনকে আসামি করেন। তারা হলেন, যথাক্রমে সৌরভ হোসেন (২৮), মোহাম্মদ ইলিয়াস (৩৪), মোহাম্মদ রুবেল (২৯), মোহাম্মদ ইয়াসিন (৩৫), মো. বাহাদুর (২৮), রাশেদুল ইসলাম বাবু (২৭), মো. কাউসার আলম (৫৫), মো. শিবলী সাদেক ওরফে সোহেল মিয়া (৩৬), মো. সোহেল (৩০), সুজন গাজী (৩৫), মো. ইসলাম হোসেন ওরফে ইসমাইল হোসেন (৩৮), শাহাদাত হোসেন (৪৮), মো. আওলাদ হোসেন (৩৮) ও মো. আবুল বাশার (২৬)। এদের মধ্যে ষষ্ঠ আসামি রাশেদুল ও দশম আসামি সুজন ঘটনার সময় ছিলেন কারাগারে। প্রধান আসামি সৌরভ হোসেন একটি হত্যা মামলার বাদী এবং সোহেল, ইসলাম হোসেন ও আবুল বাশার ওই হত্যা মামলার সাক্ষী। আর নালিশি মামলাটির বাদী আলফাজ উদ্দিন ও তার চার ছেলে হলেন সৌরভের দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি।
প্রতিবেদনে পিবিআই কর্মকর্তা সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে শিরিনা বেগম বাদী আলফাজ উদ্দিনের স্ত্রী এবং মোস্তফা কামাল, মোশাররফ হোসেন ও আল আমিন তার ছেলে। আবার রেনজিনা বেগম ও নারগিস আক্তার আলফাজের পুত্রবধূ এবং শাহাদাত হোসেন তার নাতি। এছাড়া সাক্ষীদের মধ্যে রতন, মো. মনির হোসেন, মকবুল, সিদ্দিক মিয়া, মো. রাজু পিবিআই কর্মকর্তাকে কোনো সাক্ষ্য দেননি বলে আদালতে হলফনামা দিয়েছেন। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমার মনে হয় ঘটনাটি তদন্ত কর্মকর্তা ভালোভাবে তদন্ত করেননি অথবা তিনি বাদীপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। জেলে থাকা দুইজনকে আসামি করতে হলে কারা কর্তৃপক্ষকেও আসামি করতে হবে। কারণ তারা কারাগারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে দুই আসামি কীভাবে অন্যের বাড়িতে ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি ও মারধর করেন? সেই হত্যা মামলার বিষয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ জুলাই বায়েজিদ বোস্তামী থানার আমিন কলোনি এলাকায় ওয়াই-ফাই সংযোগ নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন আবুল কালাম (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনার পর কালামের ভাই সৌরভ হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন বড়ুয়া শাপলা তদন্ত করে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আলফাজ উদ্দিন (৬২) এবং তার চার ছেলে মো. মোশাররফ হোসেন (৩৫), মো. মামুন (৩২), আল আমিন (২৬) ও মোস্তফা কামালসহ (২৮) মোট সাতজনের নাম ছিল। সৌরভ হোসেনের অভিযোগ, তার ভাই আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি আলফাজ উদ্দিন নিজে ও তার চার ছেলেকে বাঁচাতে উল্টো আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলা তদন্ত করে ডিবি অভিযোগের সত্যতা না পেলেও পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সৌরভ বলেন, ‘আমাকে আমার ভাই আবুল কালাম হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আসামি আলফাজ উদ্দিন ও তার ছেলেরা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের মামলা দায়ের করেন। যেটি ডিবির তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হলেও পিবিআই কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন।’
সৌরভ অভিযোগ করে বলেন, ‘পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটির বিষয়ে সমঝোতা করার জন্য আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি গরিব মানুষ, টাকা দিতে পারিনি। এছাড়া গোপনে তিনি আমাকে হত্যা মামলা আপস করার জন্যও বলেন। প্রয়োজনে তিনি আমাকে আসামিপক্ষের কাছ টাকা নিয়ে দেবেনও বলেন। কোনো কিছুতে রাজি না হওয়ায় পিবিআই কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।’ এটা সিআর মামলা ছিল। এ ধরনের মামলায় অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। আসামিকে গ্রেফতার করা যায় না। সাক্ষীদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় সাক্ষীরা অতিরিক্ত বলে থাকেন। তাই ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। বিষয়টি ভুক্তভোগীরা আদালতে প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে পারলে বিচারে হয়তো তারা অব্যাহতি পাবেন। যেহেতু মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে আমি আর মন্তব্য করতে চাই না তিনি আরও বলেন, ‘ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গিয়ে এখন আমি মামলার আসামি হয়ে গেলাম। অথচ মামলায় চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনা দেখানো হয়েছে আমার ভাই হত্যাকাণ্ডের দিন, যেদিন আমরা সবাই ব্যস্ত ছিলাম আমার ভাইয়ের জানাজা-দাফন নিয়ে। আমরা যে দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন। এছাড়া পিবিআই কর্মকর্তা দুইজন ব্যক্তি কারাগারে থাকাবস্থায় বসতবাড়িতে গিয়ে চুরি করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। এতে করে বোঝা যায় প্রতিবেদনটি কেমন মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এ ঘটনায় পিবিআই কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী ‘পিবিআইয়ের কর্মকর্তা যে মামলার প্রতিবেদন দিয়েছেন, ওই মামলার বাদী আলফাজ উদ্দিন ব্যবসায়ী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি। তিনি হত্যা মামলাটি আমাকে আপস করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আপস না করায় হত্যা মামলার বাদী ও কালামের ছোট ভাই সৌরভকে আসামি করে ঘটনার ১০ মাস পর আদালতে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চাঁদাবাজির ঘটনা দেখানো হয়েছে আবুল কালাম হত্যাকাণ্ডের দিন। ওইদিন সৌরভসহ আমরা সবাই কালামের জানাজা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এছাড়া ভাঙচুর-চাঁদাবাজি মামলার দুই আসামি ঘটনার সময়ে আরেক মামলায় কারাগারেই ছিলেন। ভাঙচুর-চাঁদাবাজি মামলার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখানো এক সাক্ষীও ঘটনার সময়ে কারাগারে ছিলেন। আমার মনে হয় পিবিআই ভালোভাবে তদন্ত না করে প্রতিবেদন দিয়েছে।’ কারাগারে থেকেও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, মারধরের মামলার আসামি হওয়া প্রসঙ্গে সুজন গাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা আমার সঙ্গে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করেছেন। তখন আমি ঘটনার সময় কারাগারে থাকার বিষয়টি তাকে জানাই। উত্তরে তিনি আমাকে বলেন, ‘তুমি আমাকে চেন, আমি কে? আমি তোমাকে দুই শর্তে মামলা থেকে অব্যাহতি দেবো। আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে এবং আলফাজ উদ্দিনের হত্যা মামলা সমাধান করতে হবে।’ উত্তরে আমি তাকে বলেছি, ‘আমি তো ছাত্র মানুষ। আমি টাকা কীভাবে দেবো? আবার হত্যা মামলার সমাধানও আমি কীভাবে করবো?’ পরে শুনি উনি আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন।’ রাশেদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা আমার সঙ্গে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করেছেন। তখন মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি কারাগারে থাকার বিষয়টি জানাই তাকে। পরে শুনি তিনি আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এখন আমি তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকতর তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘এটা সিআর মামলা ছিল। এ ধরনের মামলায় অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। আসামিকে গ্রেফতার করা যায় না। সাক্ষীদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় সাক্ষীরা অতিরিক্ত বলে থাকেন। তাই ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। বিষয়টি ভুক্তভোগীরা আদালতে প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে পারলে বিচারে হয়তো তারা অব্যাহতি পাবেন। যেহেতু মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে আমি আর মন্তব্য করতে চাই না।’ তবে মামলার আসামি থেকে টাকা দাবি ও হত্যা মামলা আপসের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে সন্তোষ কুমার ‘এটি সত্য নয়’ বলে দাবি করেন।
ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছেন রাশেদুল ও সুজন কারাগারে থাকা ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করার বিষয়ে মতামত চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম দিদার উদ্দিন বলেন, ‘কারাগারে থাকা কোনো ব্যক্তির আরেকজনের বসতবাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর-চাঁদাবাজি-চুরি করা সম্ভব নয়। কারণ তিনি তখন রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। এ ধরনের প্রতিবেদন যে তদন্ত কর্মকর্তা দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’ চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমার মনে হয় ঘটনাটি তদন্ত কর্মকর্তা ভালোভাবে তদন্ত করেননি অথবা তিনি বাদীপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। জেলে থাকা দুইজনকে আসামি করতে হলে কারা কর্তৃপক্ষকেও আসামি করতে হবে। কারণ তারা কারাগারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে দুই আসামি কীভাবে অন্যের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি ও মারধর করেন?’