পরিস্থিতি যেন দুর্ভাগ্যজনক না হয়

0

গত সোমবার ১২ জুলাই দেশে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে। এদিন মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৭৬৮ জন। বর্তমানে যে হারে করোনার প্রকোপ বিদ্যমান, তা কমতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। কারণ জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে করোনার সংক্রমণ প্রলম্বিত হয়।
ভাইরাসটি ব্যাপক হারে সংক্রমণের এ পরিস্থিতির পরও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলমান বিধিনিষেধ আজ বুধবার ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মাস্ক পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর অর্থ দাঁড়াল, এ সময়ে সবকিছুই চলতে পারবে যদিও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শকে আমলে নিলে বিধিনিষেধ শিথিলের সুযোগ কতটুকু আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়ে যেদিন সরকারের তরফ থেকে তথ্যবিবরণীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানানো হয়; সে দিনই সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। অন্য দিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হওয়ার লাল বার্তাও দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। প্রথমে ৭ জুলাই পর্যন্ত থাকলেও পরে আরো এক সপ্তাহ তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, যা আজ ১৪ জুলাই শেষ হবে। শ্রমজীবী মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবার জীবিকার দিক বিবেচনা করে ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ শিথিল করলে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
যদিও বিধিনিষেধ শিথিল করার সাথে সাথে সরকারের তরফ থেকে নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তবে অভিজ্ঞতা ভিন্ন। অতীতে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে বেখবর বা উদাসীন ছিলেন। তাই বলা যায়, এবারের আট দিন বিধিনিষেধ শিথিলের সময়ে মানুষজন কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন সে সংশয় থেকেই যায়। কঠোর লকডাউন চলাকালেও সড়কে বা বাসাবাড়ির বাইরে মানুষ চলাচল করেছেন। তবে এ কথাও সত্যি, সরকার শুধু লকডাউন ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। তা না হলে লকডাউনকালে শ্রমজীবীদের নিত্যদিন খাবারের সংস্থান কিভাবে হবে, সে বিষয়ে সরকারি প্রস্তুতি মানে, খাদ্য সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের বাধ্য হয়ে লকডাউনের মধ্যেই কাজের জন্য বেরুতে হয়েছে। তারা অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নাজেহাল হয়েছেন।
আমরা মনে করি, আসন্ন ঈদে নাগরিকদের প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিধিনিষেধ শিথিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে; সেই আট দিন যেন কঠোরভাবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তীক্ষè নজরদারি করতে হবে। তা না হলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার যে শঙ্কা বিশেষজ্ঞরা করছেন, তা বাস্তব হয়ে দেখা দিতে পারে। সেটি সবার জন্যই হবে দুর্ভাগ্যজনক।