মানুষ বাঁচাতে কঠোরতা অপরাধ নয়

0

এই মূহূর্তে দেশের প্রধান জিজ্ঞাসা কোন দিকে যাচ্ছে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি। খুব স্বাভাবিক এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। মাত্র দু’দিন আগে লকডাউন শিথিল ঘোষণা করে দেশের সকল ব্যবসা-বাণিজ্যের দরজা উন্মুক্ত করা হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে বড় বড় শপিংমল থেকে ছোটো-বড় সব মার্কেট। শিথিল করা জন চলাচলের সুযোগটা জনগণই উন্মুক্ত করে নিয়েছে নিজের নিজের খেয়াল খুশিতে। সরকারের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ জনগণ যেমন মানছে না তেমনি প্রশাসনও তা মানাতে কোনো ভূমিকা রাখছে না। ফলে, শহর গ্রাম সর্বত্র জনতার ঢল বয়ে যাাচ্ছে। লকডাউন শিথিল ও বাজার সচলের আদেশ যেন মানুষ ঈদ উৎসব হিসেবে ব্যবহার করছে। গতকাল ও গতপরশু দৈনিক লোকসমাজে যশোর শহর এবং বাজারে জনসমাগমের যে ছবি প্রকাশ হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে জনগণের যেমন আইন মানার গরজ নেই তেমনি প্রশাসনেরও মানানোর গরজ নেই। শনিবার থেকে সোমবার এই তিন দিনে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের দেখাই যাাচ্ছে না বলা চলে। শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় বিশেষ বাহিনীর নির্মিত জীবাণুনাশক করিডোরটাও অচল হয়ে হয়ে আছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থার প্রোপটে নিজেদের করোনামুক্ত রাখতেই বেশি ব্যস্ত রয়েছে। অন্যরাও একই অবস্থানে। ভাবখানা সব এমন যে “আপনি বাঁচলে বাপের নাম”। কিন্তু এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা যেন সবাই ভুলেই যাচ্ছে।
আমরা রোববারের সরকারি ঘোষণায় দেখলাম করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ওই দিন পর্যন্ত সর্বাধিক ৮৮৭ জন আক্রান্ত এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরদিন অর্থাৎ গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রেকর্ড ১০৩৪ জন হয়েছে। মৃতের সংখ্যাও কম নয়, ১১ জন। মাত্র দুদিনের এই পরিসংখ্যান বলে দেয় দিন যাচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই বৃদ্ধি ক’দিন আগে উৎপাদনমুখি বা রফতানিমুখি শিল্প কারখানা চালুর কারণে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের এইমত সঠিক হলে প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক যে, বর্তমান পরিস্থিতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে। এখানে বলে রাখা ভালো লোকেলোকারণ্য পরিস্থিতি শুধু যশোর নয় সারাদেশেই বিরাজমান। যা মূল্যায়ন করে সরকার সমর্থক ১৪ দল নেতারা বলেছেন, “লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য বুমেরাং হবে”। কথাটি কয়েকদিন আগে এই কলামে আমরাও বলেছিলাম, বর্তমান দুদিনের মূল্যায়নে আবারও বলছি, এ অবস্থার পরিবর্তন না ঈদ আনন্দ মারাত্মক নিরানন্দে পরিণত হতে পারে। সময় থাকতে সিদ্ধান্ত সরকাকেই নিতে হবে। মানুষ বাঁচাতো কঠোরতা অপরাধ নয়।