৩০তম বর্ষে পদার্পণে দিনভর আয়োজনে শুভানুধ্যয়ীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত লোকসমাজ

২৯ বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় লোকসমাজ বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ ভালোবাসা, সংগ্রাম আর নিরবচ্ছিন্ন সত্য বলার সাহসে গৌরবময় তিন দশক পেরিয়ে এসেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঠকনন্দিত দৈনিক লোকসমাজ। শুভানুধ্যায়ী ও পাঠকদের অকৃত্রিম মমতায় সিক্ত হয়ে পত্রিকাটি পদার্পণ করেছে ৩০তম বর্ষে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিওে বৃহস্পতিবার দিনভর আয়োজন ছিল উৎসবমুখর ও স্মৃতিচারণের। প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে স্মরণ, দোয়া, কবর জিয়ারত ও কেক কেটে উদ্যাপন করা হয় এই বিশেষ দিনটি। পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা ও ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ে মুখর হয়ে ওঠে পত্রিকা পরিবার।

সকালে কারবালা কবরস্থানে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রায়ত সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর হোটেল ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল মিলনায়তনে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

দোয়া মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় দৈনিক লোকসমাজ সম্পাদক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, ‘পত্রিকাটি ২৯ বছর পূর্ণ করে ৩০ বছরে পদার্পণ করেছে। একটি একটি করে দিন পার করে এই ২৯টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়গুলো কেমন ছিল যারা পেরিয়েছে তারাই জানে। এই ২৯ বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় লোকসমাজ বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, উজান স্রোতে চলেছে।

তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন নিয়ে তরিকুল ইসলাম পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটিও এক উত্তাল সময় ছিল। দেশে তখন অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছিল, মতপ্রকাশের প্রায় সব পথ বন্ধ হতে চলেছিল। সেই সময়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের কথা বলার প্রয়োজনে লোকসমাজ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ এক শেরপা, যিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।

রাজনৈতিক মতভেদ বা সামাজিক বিভাজনকে উপেক্ষা করে পত্রিকাটি সবসময় আসল কথাটি বলার চেষ্টা করেছে। এজন্য আমরা অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা পেয়েছি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার গঠনের পর নির্যাতনের মুখে পত্রিকাটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরাই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

সম্পাদক বলেন, আমরা নানা বৈরী সময় পার করেও সেই পথ ধরে চলেছি। সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লোকসমাজ টিকে আছে। এমনকি ১/১১-এর সময়, যখন প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে ছিলেন, তখনও লোকসমাজ-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়নি। আমরা গর্বিত যে, মানুষের কথা বলার এই ধারাবাহিকতা আজও অটুট রয়েছে। আগামীতেও সকলের সহযোগিতা পেলে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের এই ধারা অব্যাহত রাখব।

জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘লোকসমাজ পাঠকনন্দিত বলেই দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে টিকে আছে। পাঠকের ভালোবাসা অর্জনের মূল কারণই প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক তরিকুল ইসলামের মনন, চরিত্র ও জনকল্যাণে তাঁর নিবেদিতপ্রাণতা। তাঁর সেই মানসিকতাই পত্রিকার প্রকাশনাকেও প্রভাবিত করেছে। কঠিন সময় পার করেও লোকসমাজ মানুষের কথা বলার জায়গা ধরে রাখতে পেরেছে। আমি লোকসমাজ-এর ৩০ বছরের পদার্পণে শুভেচ্ছা জানাই। আগামীর দিনগুলো আরও সুন্দর হোক, পত্রিকাটি মানুষের ও সমাজের কথা বলুক।’

পত্রিকার প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক তরিকুল ইসলামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, লোকসমাজ এর অসংখ্য পাঠক, লেখক, গ্রাহক, সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, হকার ও এজেন্টদের আমরা কৃতজ্ঞ। দুঃসময়ে তারা কখনো আমাদের ছেড়ে যায়নি।

পরে প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও যশোর উন্নয়নের কর্ণধার খ্যাত তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, যশোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম উদ-দ্দৌলা, দৈনিক লোকসমাজ এর নির্বাহী সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রেজা দুলু, অ্যাডভোকেট মো. ইসহাক, অ্যাডভোকেট জাফর সাদিক, নতুনহাট পাবলিক কলেজের সভাপতি এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম সোহান, প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান, সাবেক সম্পাদক আহসান কবির বাবু, জেলা লোহা ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সাইফুদ্দৌলা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পাভেল চৌধুরী, সাংবাদিক অধ্যাপক মশিউল আযম, লেখক ও গবেষক বেনজীন খান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট যশোর জেলা শাখার সদস্য সচিব নির্মল কুমার বীট, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মল্লুক চাঁদ, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুণ, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আউলিয়া, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ মলি¬ক, চিকিৎসক নেতা ফারুক এহতেশাম পরাগ, আইনজীবী বুরহান উদ্দিন জাকির, জেলা মিনিবাস ও বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার কুণ্ডু, দৈনিক সমাজের কথা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমিনুর রহমান মামুন, দৈনিক কল্যাণ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান উদ্দৌলা মিথুন, দৈনিক স্পন্দন’র নির্বাহী সম্পাদক মাহবুব আলম লাভলু, সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক মাহতাব নাসির পলাশ, ক্রীড়া সংগঠক খান মো. শফিক রতন, এ বি এম আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি যশোর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইবাদত খান, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জিল¬ুর রহমান ভিটু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

পরে লোকসমাজ পরিবারের সদস্য, মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সম্পাদক অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিতকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় জেলা বিএনপি, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, প্রেসক্লাব যশোর, দৈনিক গ্রামের কাগজ, স্পন্দন, সমাজের কথা, কল্যাণ, রানার, সুবর্ণভূমি, রাতদিন নিউজ, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, যশোর হকার্স ইউনিয়ন, কুইন্স হাসপাতাল প্রা. লি., মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর, কলেজ শিক্ষক সমিতি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়।

পরে দৈনিক লোকসমাজ কার্যালয়ে প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত পত্রিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবির নান্টু।

সন্ধ্যায় পত্রিকার কার্যালয়ে প্রকাশককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ মোটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি, যশোর সার্কেল, গাজী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজ এবং সপ্তসুর সংগীত একাডেমির নেতৃবৃন্দ।