বেনাপোলকে ‘ইউনিফাইড বন্দরে’ রূপান্তরে বাধা জমির স্বল্পতা

0

মো. কামাল হোসেন, বেনাপোল॥ দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলকে আন্তর্জাতিকমানের ‘ইউনিফাইড বন্দর’ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৩ হাজার ৫শ কোটি টাকার ‘এক্সেস’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প শুরুর আগেই বড় সংকট সৃুষ্টি হয়েছে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। প্রকল্পের জন্যে প্রয়োজনীয় ১০২ একর জমির বিপরীতে এ পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা গেছে মাত্র ৫২ একর। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তাই বন্দর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

দেশের সর্বাধিক রাজস্ব অর্জনকারী স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতি বছর সরকারের ঘরে যায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ বাড়তি পণ্য চাপ সামলাতে বর্তমান অবকাঠামো বহু আগেই অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। সীমিত জায়গা, অপর্যাপ্ত শেড, ইয়ার্ডের কারণে ট্রাকজট এখন নিয়মিত ঘটনার পরিণত হয়েছে। ‘ইউনিফাইড বন্দর’ নির্মাণের জন্যে যে ১০২ একর জমি নির্ধারিত ছিল সেখানে আধুনিক ওয়্যারহাউস, কনটেইনার টার্মিনাল, হেভি স্টক ইয়ার্ড, বড় ট্রাক টার্মিনাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ফায়ার স্টেশনসহ সমন্বিত অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু জমি সংকটের কারণে তা থমকে আছে।

একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলেন, স্থান সংকটের কারণে ভারতীয় সীমান্তে শ’শ ট্রাক দিনের পর দিন আটকে থাকে, মাল খালাসে সময় বাড়ে ও ব্যবসায়ীদের ডেমেজ খরচও কয়েকগুণ হয়। তাদের মতে, পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়া আধুনিক বন্দর নির্মাণের মূল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, ৩ হাজার ৫শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হলে প্রথম শর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত জমি। ১০২ একর জমির মধ্যে যদি মাত্র ৫২ একর অধিগ্রহণ করা হয় তবে এই প্রকল্প কখনোই পূর্ণতা পাবে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক ইকবাল ডব্লু বলেন, প্রতিদিনই দেখছি ট্রাকের লাইন কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যায়। জায়গার অভাবে চালান খালাসে সময় লাগছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ। এতে আমদানি-রফতানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

একটি শ্রমিক সংগঠনের সদস্য শাহিনুর রহমান বলেন, জায়গা সংকটে শ্রমিকদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে। শেড কম হওয়ায় পণ্যজট তৈরি হলে রাতদিন বন্দর এলাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মো. শামীম হোসেন জানান, বুড়িমাড়ি, ভোমরা ও বেনাপোল-এই তিন স্থলবন্দরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ‘এক্সেস’ প্রকল্প শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বাধিক উন্নয়ন হবে বেনাপোলে। তবে জমি সংকট দূর না হলে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।