বাংলাদেশ যেভাবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের ‘কাঁদাচ্ছে’

0
বাংলাদেশ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় জোর ধাক্কায় ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি।। ছবি- সংগৃহীত

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ এক সময় ভারতীয় পেঁয়াজের প্রধান ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ ভারতে উৎপাদিত হয়ে ঢাকার বাজারে প্রবেশ করত। তবে সম্প্রতি দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে গেছে। গত আট মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় কোনো পেঁয়াজই আমদানি করেনি। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের ঘরোয়া বাজারেও। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমে গেছে, অথচ রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ভারতের রপ্তানিকারক ও কৃষিনির্ভর সংগঠনগুলোর মতে, এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী ভারতের সরকার নিজেই। কারণ গত কয়েক বছরে একাধিকবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ঠিক যখনই বাজারে চাহিদা বাড়ে, তখনই রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়—এই অনিশ্চয়তার কারণে অনেক দেশ বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশ এখন চীন, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ভারতীয় পেঁয়াজ আর বাংলাদেশের প্রধান নির্ভরতার জায়গা নয়।

ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের আরেকটি অভিযোগ হলো—দেশটির উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যাওয়ায় সেসব দেশ নিজেরাই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ফেলেছে। ফলে একসময় যারা ভারত থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি করত, তারাই এখন নিজেরাই পেঁয়াজ উৎপাদন করছে।

একজন অভিজ্ঞ রপ্তানিকারক বলেন, “একসময় বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল। এখন তারা নিজেরাই উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা।” তিনি আরও বলেন, এখন আর ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজের গুণগত মানের দিকে তাকায় না, তারা মূলত দামের প্রতিযোগিতা করছে।

ভারত ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একাধিকবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এমনকি অতীতে ২০১৯ ও ২০২০ সালেও কয়েক মাস ধরে রপ্তানি বন্ধ ছিল। এই ধারাবাহিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের বাজারনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে ভবিষ্যতে আরও বড় বাজার হারানোর শঙ্কা রয়েছে। কারণ একবার যদি কোনো দেশ বিকল্প উৎসে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তবে আগের বাজারে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয়, সৌদি আরবের মতো বড় বাজারও ভারতীয় পেঁয়াজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সৌদি ব্যবসায়ীরা ইয়েমেন ও ইরান থেকে সস্তায় পেঁয়াজ আমদানি করছে বলে জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পেঁয়াজের বাজারে এখন ভারত আর একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখতে পারছে না। দীর্ঘদিনের ভুল নীতিগত সিদ্ধান্ত ও ঘনঘন নিষেধাজ্ঞার ফলেই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি খাত আজ এ সংকটের মুখে।