বেনাপোল বন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

0

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা ॥ বেনাপোল স্থলবন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। কাস্টমস কমিশনারের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। পূর্ব ঘোষণা বা প্রস্তুতি ছাড়াই গত সপ্তাহে এই নির্দেশ জারি হওয়ায় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি জমেছে। হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের ফলে দুই সীমান্তে আটকে আছে দেড় হাজারেরও বেশি ট্রাক। এসব ট্রাকে রয়েছে ফল, সবজি, মাছ, রাসায়নিক কাঁচামাল ও কসমেটিকসসহ দ্রুত পচনশীল পণ্য, যেগুলোর অনেকই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সন্ধ্যার পর বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতবাক। শ’শ ট্রাক দুই পাশে আটকে আছে, ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে কেউই বেনাপোলের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এইভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে হিলি বা সোনামসজিদ বন্দরে চলে যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়েও বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের এই একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুই দেশের বাণিজ্য বিশ্বাসের সংকটে পড়েছে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, আমরা বন্দর পরিচালনা করি, কাস্টমসের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো পণ্য ক্লিয়ার করা সম্ভব নয়। তবে এমন আকস্মিক পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক, রাজস্ব ও ব্যবসা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কাস্টমস কমিশনার খালিদ মো. আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।

তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) ২৪ ঘণ্টা খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের সব কাস্টমস হাউসকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেয়, যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু বেনাপোলে সেই নির্দেশনা বাস্তবে কার্যকর হয়নি।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সমন্বয়ের অভাবে বারবার প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ২শ ৫০ কোটি টাকার পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি হয়। কিন্তু সময়সীমা কমে যাওয়ায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বড় ধরনের স্থবিরতা এসেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরে আকস্মিক প্রশাসনিক পরিবর্তন বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালুর দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন, দুই দেশের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে বাণিজ্য আবারও স্বাভাবিক হবে।

আমদানি ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, আমরা বারবার বলেছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কিন্তু তা না করে একতরফাভাবে সময়সীমা কমানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী, কর্মচারী, এমনকি সরকারও। আমরা কাস্টমস কমিশনারের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি, প্রতিদিন অন্তত ৪শ থেকে ৫শ আমদানি মুখি ট্রাক প্রবেশ করতে পারে।

বেনাপোল বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এ বন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৪৫০টি ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো, এখন তা নেমে এসেছে ১৮০ থেকে ২শটিতে।