প্রকাশকের কথা

0

বাংলাদেশের বুক চিরে উঠেছে নতুন ভোর আজ থেকে ঠিক ছিয়াশি দিন। বা প্রায় তিনমাস আগে। আজকের এই নতুন বাংলাদেশে আমি স্মরণ বারছি ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া হাজারো তাজা প্রাণকে। গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি সেই সব বীর ছাত্র জনতাকে- যারা ক্ষত যন্ত্রণা আর ফ্যাসিজমের বুলেটের আঘাত শরীরে নিয়ে আজো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ ষোল বছর রাজপথের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া দলীয়-নির্দলীয় সর্বস্তরের মানুষের; যাদের হাত ধরে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে দৈনিক লোকসমাজ তার ২৮ বছর পূর্ণ করে ২৯ বছরে পদার্পণ করছে। এই দীর্ঘ পথচলা বিশেষ করে গত ১৭ বছর প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে দৈনিক লোকসমাজকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। ভয় দেখানো হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবাদকর্মীরা বারংবার হুমকি ও হামলার শিকার হয়েছেন। তবু এ দাবি লোকসমাজ করতেই পারে যে, ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে একমাত্র দৈনিক লোকসমাজই শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিরত খবর প্রকাশ করেছে, ক্ষমতার মুখের সামনে তুলে ধরেছে তার বীভৎসতা ও বিরোধীমত দমনের অমানবিক ঘটনাবলী।

আজ এই দিনে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক জননন্দিত রাজনীতিবিদ জননেতা তরিকুল ইসলামকে। যার বিকাশ হয়েছিল আরেক স্বৈরাচার আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া, দাবিদাওয়া পত্রিকার পাতায় তুলে ধরতে তিনি দৈনিক লোকসমাজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দৈনিক লোকসমাজ একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুষঙ্গ হিসাবে সত্য ও সঠিক সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে।

আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি দৈনিক লোকসমাজের পাঠক, লেখক, সাংবাদিক, কর্মকর্তা, ছাপাখানার কর্মী, এজেন্ট, হকার, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের। যারা বছরের পর বছর ধরে এই পত্রিকা নিয়মিত পাঠ করেন, প্রকাশিত খবরে আস্থা রাখেন।। দীর্ঘ ষোল বছর পরে আজ দেশের মানুষ ভয় ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা

পেরিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। যে সকল মিডিয়া হাউসগুলো পতিত ফ্যাসিবাদের নির্লজ্জ বয়ান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সদাতৎপর ছিলো, তারাও আজ নিজেদের বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু দৈনিক লোকসমাজের বদল হয়নি, বদল হবে না। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, ক্ষমতায় থাকুক সত্য প্রকাশে আমরা পিছপা হবো না।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মানুষের আশার পারদ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু ইস্যুতে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে দ্বিধা ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করি সকল পক্ষ বিচক্ষণতার সাথে একটি টেকসই সমাধানে পৌছাতে পারবে। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

দেশের মানুষ শাস্তি চায়, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো চায়। মানুষ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেমন চায়, তেমনি চায় সহনীয় দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে। তারা ভাত যেমন চায়, তেমনি তাদের হারানো ভোটাধিকার ফেরত পেতে চায়। একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। সাধারণ মানুষের চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে তাই ছাত্র গণআন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে

আমরা আহ্বান জানাই। ভয়হীন আজকের বাংলাদেশে আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন,নিরাপদে থাকুন । দৈনিক লোকসমাজ আপনাদের সাথে ছিল, থাকবে ভবিষ্যতেও।