প্রতিবন্দ্বী মেয়ের কারণে মাকে তালাক

0

 

নুর আলম, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা)॥ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কুলতলা গ্রামে কন্যা সন্তান প্রতিবন্দ্বী হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এক ব্যক্তি।
শান্তনা খাতুন(২০) নামে ওই গৃহবধূ মেয়েকে নিয়ে দরিদ্র পিতা-মাতার বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনাকে অমানবিক বলে আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয়রা।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের হারদা চানপুর গ্রামের সামসুল আলমের মেয়ে শান্তনা খাতুন বলেন, চার বছর আগে একই উপজেলার কুলতলা গ্রামের মাঝপাড়ার আব্দুল হামিদের ছেলে ফিরোজ উদ্দিন বাবুর সাথে তার বিয়ে হয়। দেড় বছর আগে তার মাহিশা নামের একটি মেয়ে হয়। জন্মের পর মেয়ের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তাকে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাকালে তার বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্দ্বীর বিষয়টি ধরা পড়ে।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে চিকিৎসক জানান যে, মেয়ে পুরোপুরি ভাল হবে না। তবে আরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পরামর্শ
দেয়া হয়। যেখানে মোটা অংকের টাকা ব্যয় হবে বলে জানান। এতে বেকে বসেন তার
স্বামী বাবু। সে উল্টো তার কাছে ৬ লাখ টাকা দাবি করে বলে, টাকা না দিতে পারলে
সে আর তাকে (শান্তনা বেগমকে) নেবে না।
অসহায় ওই গৃহবধূ আরও বলেন, ‘আমার স্বামী বাবু, শ^শুর আব্দুল হামিদ ও শ^াশুড়ী
ফিরোজা খাতুনের ধারণা আমার কারণে আমার গর্ভের সন্তান প্রতিবন্দ্বী হয়েছে।
আর তাকে সুস্থ করতে যত টাকা লাগে সব আমাকেই দিতে হবে। টাকা দিতে না পারার কারণে তারা আমাকে গত দশ মাস আগে অত্যাচার-নির্যাতন করে আমার প্রতিবন্দ্বী মেয়েসহ আমার বাবা-মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এখন বলছে আমাকে গত চার মাস আগে তালাক দিয়েছে। আমি দীর্ঘ দশ মাস যাবত আমার পিতা-মাতার বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।
শান্তনা বলেন, আমি সামাজিকভাবে বার বার চেষ্টা করেছি স্বামী-সংসারে ফিরে যেতে। কিন্তু আমার স্বামী-শ^াশুড়ীর একটাই কথা তারা আমার প্রতিবন্দ্বী সন্তানকে মেনে নিবে না। তাতে তাদের যত টাকা যায় যাবে।
তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু টাকা
পয়সার অভাবে মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমি এখন প্রতিবন্দ্বী সন্তানকে
নিয়ে অকুলপাতালে পড়েছি।


শান্তনার দিনমজুর বাবা সামসুল আলম বলেন,আমি মেয়ে ও তার সন্তানকে নিয়ে মহাবিপদের মধ্যে আছি। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করছি। প্রতিবন্দ্বী বলে যারা আমার নাতনিকে অবহেলা করল এবং আমার নিরাপরাধ কন্যাকে তালাক দিল আমি তাদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার দেখতে
চাই।
আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার
বলেন,ঘটনাটি অমানবিক ও দুঃখজনক। সন্তান প্রতিবন্দ্বী হলে তাকে অবহেলা করা
অপরাধ। সন্তান প্রতিবন্দ্বী হলে মাকে তালাক দিতে হবে কেন? এ ঘটনার বিচার
হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন,ঘটনাটি চরম
অমানবিক। একজন শিশু প্রতিবন্দ্বী হওয়া না হওয়ার ব্যাপারটা সৃষ্টিকর্তার
হাতে। সন্তান প্রতিবন্দ্বী হওয়ার কারণে স্ত্রীকে তালাক দেয়াটা চরম অপরাধের
কাজ। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেব।