যশোরে ইজিবাইকচালক মফিজুর হত্যা মামলায় ৫ আসামির মৃত্যুদ-াদেশ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক মফিজুর রহমান হত্যা মামলায় ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার যশোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক ফারজানা ইয়াসমিন এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় ৫ আসামির মধ্যে ৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক ২ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার ধানঘাটা গ্রামের বলরাম ঘোষের ছেলে দুধ বিক্রেতা গোপাল ঘোষ, হামিদপুর দক্ষিণপাড়ার জালাল উদ্দিনের ছেলে কাজল, চাঁনপাড়া গ্রামের মফজেল বাড়ের ছেলে এনামুল, হামিদপুর বিশ্বাস পাড়ার মকছেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে ইখতিয়ার বিশ্বাস ও মনিরামপুর উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের মৃত হাছিম সরদারের ছেলে বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার রহিমার বাড়ির ভাড়াটিয়া খোরশেদ আলম। এর মধ্যে এনামুল. কাজল ও খোরশেদ আলম রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুলতানপুর গ্রামের মৃত শফিয়ার রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান ২০১১ সালের ২২ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সিটি কলেজপাড়া বউবাজার এলাকার গ্যারেজে ইজিবাইক চার্জে দিয়ে সহযোগী নয়নকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা অন্য একটি ইজিবাইকে করে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বাইকের ভেতর থাকা অবস্থায় মফিজুর রহমানকে মোবাইল ফোন করে ঝুমঝুমপুর ময়লাখানার সামনে দেখা করতে বলেন হামিদপুর বিশ্বাস পাড়ার ইখতিয়ার বিশ্বাস। মফিজুর রহমান সহযোগী নয়নকে জানান, টাকা নেওয়ার জন্য তাকে ফোন দিয়েছিলেন। এরপর বাইকটি ঝুমঝুমপুর ময়লাখানার সামনে পৌঁছালে মফিজুর রহমান সেখানে নেমে যান এবং হেলপার নয়নকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এসময় নয়ন দেখতে পান ময়লাখানার সামনে ইখতিয়ার বিশ্বাস দাঁড়িয়ে আছেন এবং মফিজুর রহমানের সাথে কথা বলছেন। এছাড়া ময়লাখানার মেহগনি বাগানের ভেতর আরও ৪/৫ জনকে দেখতে পান তিনি। এরপর রাত ১২টার দিকে নয়ন ওই বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু ওইদিন রাতে মফিজুর রহমান বাড়িতে ফিরে না আসায় পরদিন এ সংক্রান্তে কোতয়ালি থানায় জিডি করেন তার বড়ভাই মতিয়ার রহমান। একই সাথে তার মফিজুর রহমানকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২৪ জুন সকালে ঝুমঝুমপুর ময়লাখানা সংলগ্ন জনৈক ফারুকের পুকুরে নিখোঁজ মফিজুর রহমানের লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত মফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা বেগম অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, মফিজুর রহমান খুন হওয়ার আগে দুধ বিক্রেতা গোপাল ঘোষের স্ত্রী সুমিত্রা ঘোষ খুন হয়েছিলেন। সে সময় গোপাল ঘোষ ও তার স্ত্রী সুমিত্রা ঘোষ শহরের বকচর হুশতলার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতে খুন হয়েছিলেন সুমিত্রা ঘোষ। গোপাল ঘোষের ধারণা ছিল, পূর্ব পরিচিত মফিজুর রহমান তার স্ত্রী সুমিত্রা ঘোষকে হত্যা করেছেন। এ কারণে সুমিত্রা ঘোষ হত্যা মামলার আসামি করেছিলেন মফিজুর রহমানকে। মফিজুর এ মামলায় আটক হয়ে জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন গোপাল ঘোষ। এ কারণে মফিজুর রহমানকে হত্যার পেছনে গোপাল ঘোষের হাত রয়েছে এবং তাকে এ কাজে পূর্ব পরিচিত ইখতিয়ার বিশ্বাস সহায়তা করেন বলে নিহতের স্ত্রী আয়েশা বেগম মামলায় সন্দেহপোষণ করেন।
পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তকালে কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই নাসির উদ্দিন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ইখতিয়ার এবং খোরশেদকে আটক করেন। আটকের পর মফিজুর রহমানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি পুলিশকে জানান, মফিজুর রহমানকে মদ পান করিয়ে তারা ৫ জন মিলে অর্থাৎ ইখতিয়ার, খোরশেদ, এনামুল, কাজল ও গোপাল মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। পরে তারা লাশ পুকুরের পানিতে ফেলে দেন। পুলিশকে আরও জানান, গোপাল ঘোষের স্ত্রী খুন হওয়ায় এরই প্রতিশোধ নিতে মফিজুর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ আটক ইখতিয়ার ও খোরশেদকে আদালতে সোপর্দ করলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর মামলার তদন্ত শেষে উল্লিখিত ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই নাসির উদ্দিন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।