চৌগাছায় স্টুডিওর ব্যবসায় মন্দা

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় আধুনিক সভ্যতার কাছে হার মেনেছে স্টুডিও ব্যবসা। অনেক ব্যবসায়ী পেশা পরিবর্তন করেছেন, আর এখনও যারা ব্যবসাকে আগলে ধরে রেখেছেন তাদের দিন কাটে অনেক কষ্টে। স্টুডিও ব্যবসায় আবার ফিরবে সোনালি দিন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ভুক্তভোগীরা।
নব্বই দশকের দিকে চৌগাছা বাজারে জমজমাট ছিল স্টুডিও ব্যবসা। সে সময়ে জনপ্রিয় ছিল সাদা কালো ফটো। অফিস আদালত, ব্যাংক বিমা এমনকি শখের বশত অনেকেই সাদা কালো ফটো তুলেছেন। আর ফিল্মের রঙিন ফটো ছিলো অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মত। বিয়ে বা বাৎসরকি কোনো উৎসবে স্টুডিও থেকে ক্যামেরা ভাড়া করে তোলা হতো রঙিন ফটো। সেই ফটো যারা তুলতেন তা হাতে পেতে প্রহর গুনতে হয়েছে এক বা দুই সপ্তাহের মত। সে সময়ে ফটো তোলার জন্য মানুষকে আয়োজন করে সাজু গুজু করে যেতে হয়েছে স্টুডিওতে। ছবি তোলার পর অপেক্ষা কবে পাবো কাঙ্খিত ফটো। স্টুডিও ব্যবসা বেশ লাভজনক হওয়ায় দেখতে দেখতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সৌখিন এই ব্যবসা খুলে বসেন এবং ব্যবসাও করেন জমজমাট।
চৌগাছা বাজারে ওই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল জনি, সাথী, যমুনা. বাবুল স্টুডিওসহ বেশ কিছু স্টুডিও। দিন যত যাই স্টুডিও ব্যবসাতে দেখা দিতে থাকে মন্দা ভাব। এরমধ্যে তিন জন ব্যবসায়ীর অকাল মৃত্যু ঘটে এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসা গুটিয়ে পাড়ি জমান প্রবাসে কেউ বা চলে যান অন্য পেশাতে। তারপরও যারা আজও সেই ব্যবসাকে আগলে ধরে রেখেছেন তারা নিদারুন কষ্টে দিন পার করছেন এমনটিই জানা যায় তাদের সাথে কথা বলে।
যমুনা স্টুডিও মালিক বাবুল আক্তার বাবু জানান, বহু আগেই তিনি জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই প্রতিষ্ঠান কিনে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে খুব ভাল ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার কাছে স্টুডিও ব্যবসা যেন আত্মসমর্পণ করেছে। এখন আর আগের মত মানুষ ফটো তুলতে আসে না। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে হাতের মোবাইল ফোনে একটি ছবি তুলে তা যে কোনো কম্পিউটারের দোকানে গেলে প্রিন্ট করে দিচ্ছে। অল্প সময় আর কম খরচে পাওয়ার কারণে আমাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, চৌগাছা বাজারে মিনি ল্যাবে আমি ছবি প্রিন্ট করি। যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ছবি তোলেন তারাই কেবল ছুটে আসেন স্টুডিওতে। এছাড়া শখ করে অনেকে আসেন তার সংখ্যা খুবই কম। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
স্টুডিও ব্যবসায়ীরা জানান, অফিস আদালতসহ সকল সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে ল্যাবপ্রিন্ট ফটো যদি বাধ্যতামূলক করা হতো তাহলে হয়ত কিছুটা ব্যবসা হতো। কিন্তু সেটি তো আর চাইলেই সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, আধুনিকতা ছেড়ে মানুষ আবারও ফিরবে স্টুডিওতে জমজমাট হবে ব্যবসা সেই সোনালি দিনের আপেক্ষায় আমরা।