বিপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, আটক না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও চাঁদা দাবির অভিযোগে কোতয়ালি থানায় এবং আমলী আদালতে পৃথক দুটি মামলা হলেও তাকে এখনো আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন সাইবার নিরাপত্তা আইন ও চাঁদা দাবির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আমলী আদালতে অপর মামলাটি করেছেন চট্টগ্রামের মেসার্স নদী বাংলা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। দুই মামলার ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় হলেও অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বিপুল আটক না হওয়ায় এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
শহরের পুরাতনকসবা ঘোষপাড়ার জবেদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন বিপুল নানা কারণে আলোচিত। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের লালন, যবিপ্রবি ছাত্র কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গেলেও রহস্যজনক কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে এবার মদ্যপ অবস্থায় আলোচিত পৌর কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন আটক হওয়ার পর তার পক্ষে আনোয়ার হোসেন বিপুল অবস্থান নেওয়ায় পুলিশকে নড়েচড়ে বসতে দেখা গেছে।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার ঘটনায় নিহতের মামা রফিকুল ইসলাম রাজু ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন আনোয়ার হোসেন বিপুল। হত্যাকান্ডের কয়েকদিন আগে কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদকে মোবাইল ফোন করে হুমকি দিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন বিপুল। যা রেকর্ড করে রেখেছিলেন কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ। মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখা এই অডিও সিআইডি পুলিশের কাছে সরবরাহ করার পরও আনোয়ার হোসেন বিপুলকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিলো।
মামলার বাদি রফিকুল ইসলাম রাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আনোয়ার হোসেন বিপুল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং সিআইডিকে টাকা দেওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দিয়েছেন। ওই চার্জশিটের ওপর নারাজি জানাতে ধার্যদিনে আদালতে গিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম রাজু। তখন আনোয়ার হোসেন বিপুলের ভাই পলাশসহ কয়েকজন আদালত থেকেই তাকে অপহরণের চেষ্টা চালান। পরে পুলিশ ও সাংবাদিকরা এগিয়ে আসায় তিনি রক্ষা পান। রফিকুল ইসলাম রাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুনেছি যে পলাশ তাকে আদালত থেকে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি নাকি এখন উকিল হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন মামলাটি যশোর থেকে স্থানান্তর করে ঢাকায় নেওয়ার ন্যে। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেছে। ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়েছে। সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এখন তিনি রিয়াদ হত্যা মামলায় যশোর সিআইডি’র দেওয়া চার্জশিটের ওপর নারাজি জানাবেন।
কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যাকান্ডের পর আনোয়ার হোসেন বিপুলের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা -কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন।
২০২০ সালে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনার অফিস দর্শনা শুল্ক স্টেশনের জন্যে একটি স্ক্যানার ক্রয় করতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করেছিলো। একই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মেহেদী হাসান স্বপন নামে একজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দেওয়ায় তাকে মারধর করেছিলেন আনোয়ার হোসেন বিপুল বলে একটি মামলায় অভিযোগ করেছিলেন স্বপন।
একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে আদালতে ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী আজহারুল ইসলাম মানিক। যশোর-৬ আসনের তৎকালীন এমপি শাহীন চাকলাদার সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে এই মামলা করা হয়।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী সমাবেশে আনোয়ার হোসেন বিপুল বালিয়া ভেকুটিয়া স্কুল কেন্দ্র দখল করে নৌকায় প্রকাশ্যে সিল মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি এবং রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করলেও রহস্যজনক কারণে এতোদিন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আনোয়ার হোসেন বিপুল এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আলোচিত পৌর কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনকে মদ্যপ অবস্থায় আটক করা হলে তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেন আনোয়ার হোসেন বিপুল। অবশ্য পুলিশ এবার তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। এরই মধ্যে থানায় ও আদালতে আনোয়ার হোসেন বিপুলের সাইবার নিরাপত্তা আইনে এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত আটক হননি আনোয়ার হোসেন বিপুল।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলনের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী শুক্রবার বিকেলে জানান, আসামি বিপুলকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আটকের জন্যে পুলিশ তৎপর রয়েছে।