সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতা নিয়ে ভাবতে হবে

0

“সাক্ষী না থাকায় খালাস ৭৬ ভাগ আসামি।” এই শিরোনামে একটি সংবাদ গতকাল দৈনিক কাল’বেলা পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদন হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালাস পাওয়া এসব মামলার বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। মামলাগুলো হচ্ছে-মাদক মামলা, বিচারিক আদালত সাক্ষীদের জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট ইস্যুর পরও সাক্ষী অভাবে আসামিকে খালাস আদেশ দিতে ‘বাধ্য’ হন। আদালত এ ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে আসামির মুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদক মামলায় সাক্ষীরা আদালতে আসেন না। তাদের কোনোভাবেই হাজির করা যায় না। ফলে সাক্ষ্য অভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের সাজা হচ্ছে না। খবরটি অবশ্যই উদ্বেগজনক। মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্সের যুগে মাদক কারবারিদের বেকসুর খালাস পাবার এই বিশাল হার কোনোভাবেই সুখকর নয়। সাক্ষী হাজিরে অক্ষ মতা প্রকাশে মন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কিনা সেটিও বিচার্য বিষয়।
মাদক নির্মুল করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় এই দায়িত্বের অধিকারী। মাদক কারবারী, সেবী, উৎপাদক, পাচারকারি, আমদানিকারি, সবাইকে গ্রেফতার করা ও মাদক উদ্ধারের দায়িত্ব যেসব সংস্থার তারা সবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত। মাদক মামলা দায়ের, মামলার সাক্ষী নির্বাচন, মামলার তদন্ত ও চার্জশিট প্রদান এবং আদালতে সাক্ষী দিয়ে তা প্রমাণের দায়িত্ব তাদেরই। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব মূলত এসব দায়িত্ব পালন করে। আদালত শুধু সাক্ষ্য প্রদানের ভিত্তিতে রায় প্রদান করেন। কাউকে আটক করা ও দোষী প্রমাণ করা আদালতের কারো দায়িত্ব না। সাক্ষী অভাবে যে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায় তার দায় যুক্তিসংগতভাবেই আটককারী, বাদী ও তদন্তকারীর। তারা যাদের উপস্থিতিতে আটক করে সাক্ষী বানিয়েছেন এবং যাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চার্জশিট প্রদান করেছেন তাদের আদালতে হাজির করতে না পারার ব্যর্থতার দায় তাদেরই। সাক্ষীর নাম ঠিকানা যদি ঠিক থাকে, তারা যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাক্ষী দিয়ে থাকেন তাহলে আদালতে না আসার কোনো কারণ নিশ্চয় থাকে না। একইভাবে নাম ঠিকানা ঠিক থাকলে জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্টের পরও তাদের হাজির করা যাবে না এমনটা হতে পারে শুধু তারা দেশ ত্যাগের পর।
আমরা এই বাস্তবতায় বলতে পারি মাদক আটক করার পর মামলা সাজানো থেকে শুরু করে চার্জশিট প্রদান পর্যন্ত যুক্তরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যদি তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতেন তাহলে আর যায়ই হোক সাক্ষী অভাবে ৭৬ ভাগ আসামী খালাস হত না। আমরা মনে করি সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার জন্য সাজার বিধান থাকা এখন জরুরি হয়েছে। বিষয়টি আইন প্রণেতাদের ভাবতে হবে।