দীর্ঘদিন পর চৌগাছায় জলাশয়ে দেখা মিললো সোনা ব্যাঙের

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার মাঠ-ঘাট, পুকুর-ডোবাতে দেখা মিলেছে প্রায় বিলুপ্তির পথে সোনা ব্যাঙের। গত মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টির পর সকালে বিভিন্ন জলাশয়ে বিপুল সংখ্যক ব্যাঙ দেখা যায়। তাদের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকে মুখোরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
চৌগাছায় জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে সকলের কাছে অতি পরিচিত সোনা ব্যাঙ । টানা ৩৭ দিন প্রচ- তাপপ্রবাহের পরে সোম ও মঙ্গলবার বৃষ্টির দেখা মিলেছে উপজেলায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা প্রায় ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী হয়। এই বৃষ্টিপাতে পুকুর খাল বিলে জমেছে ছোপছোপ পানি। এই পনিতেই হারিয়ে যাওয়া সোনা ব্যাঙের দেখা মিলেছে। রাতভর তারা খেলা করেছে বৃষ্টির পানিতে। দিনে সূর্যের আলো বের হলেও তারা ছিল খেলায় মগ্ন। হারিয়ে যাওয়া ব্যাঙের এমন হাক ডাক আর পানিতে ছুটাছুটি অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন, অনেকে তাদের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকে হয়েছেন মুগ্ধ।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বাঁকপাড়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য কেটে নেওয়া বোরো ধানের জমিতে অল্প জমে থাকা পানিতে ব্যাঙ যেন পাগলের মত ছুটাছুটি করেছে। একটি আর একটির ওপর আছড়ে পড়ছে, সেই সাথে তাদের চিরচেনা স্বরে শুধুই ডেকে যাচ্ছে।
এ সময় মাঠে কর্মরত হায়দার আলী, ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য আজ নানা কারণে হারাতে বসেছে। এক দশক আগেও এমন বৃষ্টিতে দেখা যেত হাজারও সোনা ব্যাঙ। পানি না থাকায় তারা মারা গেছে। আবার শিকারীরা ব্যাঙ শিকার করেছে নির্বিচারে। এছাড়া জমিতে বিষ প্রয়োগেও মারা গেছে। দীর্ঘদিন পর আজ বিলের মাঠে এদের ব্যাপক ছুটাছুটি দেখে খুব ভাল লাগছে, ক্ষণেকের জন্য আমরাও হারিয়ে গেছি সেই শৈশব আর কৌশরের দিনগুলোতে।
সূত্র জানায় প্রকৃতিতে কয়েক ধরনের ব্যাঙ দেখা যায়। তারমধ্যে কুনো ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ প্রভৃতি। প্রাণীবিদরা জানান, সোনা ব্যাঙ কখনও হলুদ হয় না, বর্ষাকালে পুরুষ ব্যাঙগুলো রং পরিবর্তন করে। এর কারণ হচ্ছে ওরা এভাবেই নারী ব্যাঙদের আকৃষ্ট করে। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে এ ব্যাঙদের হলুদ হতে দেখা যায়। এ ব্যাঙ গুলোকে ’ইন্ডিয়ান বুল ফ্রগ’ বলা হয়। এরা যখন সবুজ থেকে হলুদ রং পরিবর্তন করে, তখন এদের ভোকাল স্যাকগুলো নীল রং ধারণ করে। মনে করা হয় উজ্জল রঙের পুরুষ ব্যাঙ বেশি আকর্ষণীয় নারী ব্যাঙের কাছে। ভারতের এই বুল ফ্রগ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও দেখা যায়। এরা ভেজা জায়গায় থাকতে বেশি পছন্দ করে।
চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, নানা কারণে সোনা ব্যাঙ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এরমধ্যে জলাশয়ের অভাব, মাটি নষ্ট, জমিতে অধিক পরিমাণে রায়াসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার এবং নির্বিচারে সোনা ব্যাঙ শিকার উল্লেখযোগ্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হলে আবারও সোনা ব্যাঙসহ হারিয়ে যাওয়া জলজ বহু প্রাণী আমরা ফিরে পাবো। বর্ষায় এদের কমবেশি দেখা মেলে, ওই সময়ে তারা বংশ বিস্তারে মিলনে একত্রিত হয়।