উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটার উপস্থিতি নগন্য

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে অনুষ্ঠিত দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষতো দূরের কথা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যেই ছিল না কোনো আগ্রহ।  বুধবার উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দফায় উল্লিখিত দুই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুর ১টা পর্যন্ত ১০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে এসেছেন বলে দাবি করেন প্রিজাইডিং অফিসাররা। ভোটার ও ভোট কর্মকর্তাদের দাবি, ধানের মৌসুম হওয়ায় সকলে কাজে ব্যস্ত। দুপুরের পর ভোটার বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তারা। তবে দুপুরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এবং শেষ পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল দুই উপজেলায়।
এদিকে রাত ৯টা পর্যন্ত ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল জানাননি সংশ্লিষ্ট উপজেলা দুটির সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা।
যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২৭ প্রার্থী। এর মধ্যে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৪জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উপজেলায় ৩লাখ ৬০ হাজার ৭৩৫জন ভোটার রয়েছেন। মোট কেন্দ্র ১৬৫টি। এদিকে কেশবপুর উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৬জন। এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৯৫৪। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯৫টি। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা যায়। দুই উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে কেন্দ্রে আগতরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত ১০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রিজাইডিং অফিসারগণ। ভোটার ও ভোট কর্মকর্তাদের দাবি ধানের মৌসুম হওয়ায় সকলে কাজে ব্যস্ত। দুপুরের পর ভোটার বৃদ্ধি পাবে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মাগুরাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুপ্রভাত বসু জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ২১৪৫ জন । দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪৩জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম বলে জানান তিনি।
দুপুর সোয়া ১২ টায় সুজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ফাঁকা দেখা যায়। প্রিজাইডিং অফিসার জায়েদ কাদির জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৮৩৩ জন । দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৭৬জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।
বড়েঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ২০৬৩ জন । দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪৪৬জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।
কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শেখ আব্দুর রব জানান, সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম। তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৪৯৪ জন। দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩২২জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ১২.৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। আশা করছি দুপুরের পর ভোটার বাড়বে।
সকাল থেকে মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ কেন্দ্রই ভোটারশূন্য। সকাল ৯টা ২৬ মিনিটের সময় মণিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ৫/৭ জন ভোটার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। ওই কেন্দ্রে কথা হয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ হোসেন লাভলুর সাথে। কেন্দ্রটির পাশেই তার বাড়ি। তিনি বলেন, সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসেন নি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটাররা আসবেন। তবে বেলা ১১ টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি ছিলোনা বললে চলে।
কেন্দ্রটিতে কথা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী আসমা আকতার জলির সাথে। তিনি বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না -বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। তবে ইভিএম বিড়ম্বনার কারণে ভোটগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
দুপুরের দিকে মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। এ সময় তারা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোন অভিযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুই উপজলাকে নিরপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে। কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে চাইলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জানান, ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বুধবার কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ভোট কেন্দ্রে কোন লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। সকালের দুই ঘন্টায় ভোট প্রদানের হার খুবই নগন্য ছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত কর্মীদের।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী মাধ্যমিক কেন্দ্রে বুধবার সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে মোট ভোটার ২২৪৩। কিন্তু গ্রহণ করা ভোটের সংখ্যা মাত্র ৩৫। ভোট প্রদানের হার ১.৪৭%। এ তথ্য জানান প্রিজাইডিং অফিসার আহসানুল কবীর। হলিধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটারদের কোন লাইন নেই। কেন্দ্র ফাঁকা। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩২৩। সকাল ১০.২০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৭৯টি। ভোট প্রদানের হার ২.৩৭%। প্রিজাইডিং অফিসার আবু তারিক এ তথ্য জানান। সদর উপজেলার মধুপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৯৩৭। বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পোল হয় ১১১টি ভোট। ভোট প্রদানের হার ২.২৪%। প্রিজাইডিং অফিসার মোফিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বেলা দুইটার দিকে সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তা ভোটার শূন্য দেখা যায়। সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টায় ভোট কাস্টিংয়ের হার ১৭%।
প্রিজাইডিং অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, বাজারগোপালপুর ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ১৯৭৯। দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩৫৪ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। বাজারগোপালপুর কলেজ শাখা কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১৯৯৩। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়ে ১৭৮টি। ভোট প্রদানের হার ৮.৯৩। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে দুই উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রির্টানিং অফিসার জেলা নির্বাচন অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, রাতে ঝড়বৃষ্টির কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা আসতে দেরি করতে পারে। তবে এখনো পর্যন্ত সবকিছুই পজিটিভ আছে।
নাজমুস সাকিব নামে বংকিরা ভোট কেন্দ্রের এক ভোটার জানান, তাদের কাছে এ পর্যন্ত কোন প্রার্থী ভোট চাননি। প্রার্থীরা এসে গ্রামের মাতুব্বরদের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। সে কারণে ভোটাররা ভোট দিতে আসেন নি।