পুলিশকে ধন্যবাদ এবং প্রত্যাশা

0

যশোর পুলিশ ধর্ষক কিশোরদের একটি গ্যাং চিহ্নিত করার পাশাপাশি ৩ ধর্ষককে আটক করেছে। গতকাল দৈনিক লোকসমাজসহ যশোরের পত্রিকাগুলোতে এ সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় অভিযান সফলের কৃতিত্বের দাবিদার ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহমেদ ও কোতায়ালি ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। মারুফ আহমেদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ঘটনার মূল বিষয় ছিল শহরের শঙ্করপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আল-আফসান পুষ্প নামের ১৫ বছরের এক কিশোর শহরতলীর একটি গ্রাম থেকে গত ১ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে তার ১৪ বছর বয়সী কিশোরী বান্ধবীকে মোটরসাইকেলে ঘুরতে যাবার নাম করে শহরে নিয়ে আসে। পুষ্প তার কিশোরী বান্ধবীকে নিয়ে যায় খড়কির একটি প্রাচীর ঘেরা মেহগুনি বাগানে। সেখানে পুষ্প অপর ৩ কিশোর বন্ধুর সহযোগিতায় ওই বান্ধবীকে জোর করে মদ পান করায় এবং চার বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর তারা ওই কিশোরীকে নিয়ে যায় লোন অফিসপাড়ার সন্ত্রাসী হৃদয়ের ভাড়া বাসায়। সেখানে পুষ্প ও তার নতুন তিন বন্ধু মিলে ভোর পর্যন্ত ধর্ষণ করে। পরে সকালে তারা কিশোরীকে পৌরপার্কে নিয়ে গেলে সেখানে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় তারা কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে কোতয়ালি থানায় মামলা হলে তদন্ত ও আসামি ধরার দায়িত্ব নেয় ডিবি পুলিশ। দু’মাসের মধ্যে তারা সফলতা অর্জন করেছে এবং কিশোর ধর্ষকদের একটি গ্যাং সনাক্ত করে মূল আসামী পুষ্পসহ ৩ জনকে আটক করে আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। আমরা পুলিশের এই সাফল্যকে ধন্যবাদ জানাই।
আমরা ডিবি পুলিশকে একটু আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই কারণে যে তারা আমাদের (লোকসমাজের) দীর্ঘ লেখালেখিকে সত্য প্রমাণ করেছে। আমাদের তথ্য ভুল বা মিথ্যা ছিল না, তা পর পর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত ও অভিযানের ফলাফলে প্রমাণ হয়েছে। দৈনিক লোকসমাজ দীর্ঘদিন ধরে শহর ও শহরতলির বড় বড় অপরাধের নেপথ্যের খবরে (ফলোআপ) নানা তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট করে আসছিল যে কিশোর অপরাধীরাই মূলত এর সাথে জড়িত। ইছালীর মোশারফ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কয়েকটি খুন ও চুরি, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় কিশোর অপরাধীদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। সিআইডি পুলিশ মোশারফ হত্যার তদন্তে উদ্ঘাটন করে খুনিরা কিশোর সন্ত্রাসী গ্যাং, এরপর ডিবি পুলিশ সোনার দোকান চুরিতে আটক করে একটি কিশোর গ্যাং বেড়ে মফজেল হত্যায়ও পায় কিশোর খুনির সন্ধান। ক’দিন আগে ঘটে হাশিমপুর বাজারে সকাল বেলায় আনসার সদস্য হোসেন আলী হত্যাকান্ড। ডিবি পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের সনাক্ত করে অল্প দিনেই ৬/৭ জনকে আটক করেছে। তারা আবিষ্কার করেছে একটি বড় ধরণের কিশোর অপরাধী গ্যাং এই খুনে জড়িত। এরা মোশারফ, জয়নাল, ইদ্রিস, বেড়ে মফজেলসহ ২০টিরও অধিক হত্যায় জড়িত। সর্বশেষ তারা এই কিশোর ধর্ষক গ্যাং আটক করতে সক্ষম হয়েছে। পর পর কিশোর অপরাধীদের বড় বড় গ্যাং সনাক্ত ও আটক হওয়ায় জনমনে যেমন স্বস্তি ফিরছে তেমনি আতঙ্কও বাড়ছে। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা আসলে কত ? কারা এদের লালন-পালন করছে। ভালো-মন্দ বোদহীন এই কিশোরদের হাত থেকে রক্ষার উপায় কী ?
আসলে এ প্রশ্ন আমাদেরও। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের মদদ ছাড়া কিশোররা অপরাধী হতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা ছাড়া এই মুহূর্তে কাউকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই বলে অনেকেরই ধারণা। সঙ্গত কারণে ধরে নেয়া যায়, আশ্রয় প্রশ্রয়ের ভীত শক্তিশালী হওয়ায় কিশোরদের সংখ্যা এবং অপরাধ বাড়ছে। এটা সমাজ ও প্রশাসনের জন্য সুখকর নয়। মানুষ নিরাপদ না থাকলে প্রশাসন স্বস্তিতে থাকতে পারে না। যশোর পুলিশ, বিশেষ করে ডিবি পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকা তাই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কিশোর অপরাধীদের কারিগর ও আশ্রয়দাতাদের ধরার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি, পুলিশ রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে এক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করবে।