সততা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

0

 

 

মামলাজট বিশ্বের অনেক দেশেই সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার আইনগত অধিকার ফিরে পেয়ে থাকেন। যদিও বাস্তবে অনেক বাদী মামলার বিচার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেন না। কোন ক্ষেত্রে বিবাদী মারা যান অথচ, মামলা নিষ্পত্তি হয় না। এমনও অনেকে আছেন যারা মামলার রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও মামলার দীর্ঘসূত্রতায় তাদের জেলে কেটে যায় বছরের পর বছর। বাংলাদেশেও এই সমস্যা প্রকট। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে- মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি একজন বিচারকের বিপরীতে যুক্তরাজ্যে ১৫ হাজার ৯২৭, যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ১৪৭, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪ হাজার ১১০, কানাডায় ৩১ হাজার ১৮৬, নিউজিল্যান্ডে ১১ হাজার ৫৫৪, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৭৭ হাজার ৬২২ এবং বাংলাদেশে এক লাখ ৩৭০ জন রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে স্বস্তির সংবাদ হচ্ছে, গ্রাম আদালতগুলোতে এ পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গ্রাম আদালতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায় প্রায় ১২ হাজার মামলা জেলা জজকোর্ট থেকে গ্রাম আদালতে অর্পণ করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় শেষে এখন তৃতীয় দফায় এই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। গ্রাম আদালতের এই সাফল্য দেশের মামলাজট নিষ্পত্তিতে কিছুটা হলেও আশার আলো ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, আসামির ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানবিক দিক বিবেচনায় দেশের আদালতে দেয়া হচ্ছে ব্যতিক্রমী রায়। সম্প্রতি মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এক সঙ্গীতশিল্পীকে ছয় মাসের কারাদন্ডের বদলে সাজা হিসেবে ছয় মাস বিনা বেতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত। বরিশালে মাদক মামলায় ছয় বছরের সাজা পাওয়া এক যুবককে অসুস্থ মায়ের সেবা ও ১০০টি গাছ রোপণের শর্তে রায় দিয়েছে সেখানকার আদালত। এমন আরও কয়েকটি মানবিক রায় হয়েছে। ভিন্নধর্মী এই সাজার মাধ্যমে একই সঙ্গে আসামির যেমন সাজা ভোগ সম্পন্ন হবে, তেমনি তার পরিবার ও সমাজ উপকৃত হবে বলেই সকলের প্রত্যাশা।
দেশে মামলাজট প্রকট। যেসব বিষয় নিয়ে মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হন সেগুলোর বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তাছাড়া সাক্ষ্য ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে দীর্ঘ সময় ব্যয়, তদন্তে সময়ক্ষেপণ, দুর্নীতি, আইনজীবীর স্বল্পতা, সাধারণ মানুষের আইন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা থেকে অসহযোগিতার মনোভাব এবং তথ্য-উপাত্তের আধুনিকায়ন না হওয়া দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। মামলাজট নিরসনে সরকার ও বিচার বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি গ্রাম আদালতে আরও বেশি বিচার সম্পন্ন হলে মানুষের ভোগান্তি কমতে পারে বলে মত দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এমসন অনেক ঘটনায় এখন মামলা হয়, যা গ্রামে বসেই মীমাংসা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু স্বচ্ছতা, সততা নিশ্চিত করা। থানা পুলিশ এটুকু নিশ্চিত করলেই সমাধান হয়।