বাম্পার ফলন ও আমদানির পরও মূল্য বৃদ্ধি !

0

চালের দাম বাড়ছে। এখন মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে নয়। চিকন চালের দামেও কোনো লাগাম নেই। মধ্যম আয়ের মানুষের চাল বলে পরিচিত মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম ৭০ টাকা। খাদ্যমন্ত্রী একজন চাল ব্যবসায়ী হওয়ার পরও চালের এত দাম এবং বাজারের এরূপ অস্থিরতা কেন, এ প্রশ্ন অনেকেরই। টিসিবির হিসাবে মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চালের দাম প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে, কেজিতে বেড়েছে ৯ থেকে ১৩ টাকা। প্রতিটি উৎপাদন মওসুমেই সরকারি তরফে বলা হয়, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। অথচ, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। বিগত বোরো মওসুমের কথাই ধরা যাক। সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হয় বোরো মওসুমে। গত বোরো মওসুমেও তাই হয়েছে। তা সত্ত্বেও চালের দামে কোনো হেরফের হয়নি। মওসুম শেষ হতে না হতেই চালের দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত আছে। ওদিকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এমতাবস্থায়, সরকার চাল আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি বাড়িয়ে চালের মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। এ জন্য ইতোমধ্যেই চালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (কাস্টমস) প্রজ্ঞাপনে চালের মোট আমদানিশুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই হ্রাসকৃত শুল্কে চাল আমদানি করা যাবে। এই শুল্কহার শুধুমাত্র আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চালের দাম একটু বেশি থাকে। সেই বেশিটা এবার কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখনই তা বলা যাচ্ছে না। বাড়তি দামের রাস টানতে শুল্ক কমিয়ে চালের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে সেটাও বলার উপায় নেই।
চালের বাজারে অস্থিরতা এবং অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি কতকগুলো প্রশ্নের জন্ম দেয়। ধানের উৎপাদন যদি পর্যাপ্ত হয়, মজুদ যদি যথেষ্ট থাকে তবে চালের দাম বাড়বে কেন? যখন বলা হয়, ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, তখন সংগ্রহলক্ষ্য অনর্জিত থাকবে কেন? আমরা দেখেছি, চালের মজুদ কখনো কখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে কমে আসে। যেমন, গত বছরের এপ্রিলে সরকারি গুদামে চালের মজুদ ৩ লাখ টনে নেমে যায়। আবার অধিকাংশবছরই ধান-চাল সংগ্রহলক্ষ্য অর্জিত হয় না। গত কয়েক বছর একটানা লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা গর্বভরে বলে থাকেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভর হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে এ দাবির যথার্থতা প্রমাণিত হয় না। অবশ্য এ সত্য অস্বীকার করা যাবে না, গত ৫০ বছরে ধান-চালের উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের মোট চাহিদা এবং মোট উৎপাদনের পরিমাণ এক বরাবর হলে চালের সঙ্কট দেখা দেয়ার কথা নয়। প্রতি বছরই যখন লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে, তখন খাদ্যে স্বয়ম্ভরতার দাবি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এইসঙ্গে এটাও স্বীকার করে নিতে হয়, এ সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে বড় রকমের ত্রুটি আছে। পরিসংখ্যান যথার্থ না হলে ঠিক মতো পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। সঠিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের অভাবে নানা রকম অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি, দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়। জনসংখ্যার পরিসংখ্যান সঠিক না হলে তাদের সাকুল্য খাদ্যচাহিদার পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না। একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কিংবা তার অপারগতায় খাদ্য আমদানির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। ফলে খাদ্যের সঙ্কট ও খাদ্যবাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি তাই গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। পরিসংখ্যানগত ভুলত্রুটি দূর করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।