খুলনায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ও শাসক দলীয় ক্যাডারদের হামলা শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে রণক্ষেত্র মহানগরী তুহিন-রেহানা-এলিজা সহ আটক ২০, অর্ধশত আহত

0

 

স্টাফ রিপোর্টার,খুলনা ॥ খুলনায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালালে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ এবং দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের তান্ডবলীলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র এলাকা। পুলিশ বিএনপি অফিসের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং দলীয় কার্যালয় এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, নগর মহিলা দলের সভাপতি আজিজা খানম এলিজাসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পদ্মা সেতু ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের সিনিয়র নাগরিকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা কটূক্তি ও প্রচ্ছন্ন হত্যার হুমকির প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু হয়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তৃতা করতে থাকেন। তেরখাদা উপজেলা বিএনপির একটি মিছিল কেসিসি মার্কেট এলাকা থেকে সমাবেশস্থলে আসার সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হামলা করে অনেককে আহত করে। এরপরই ডুমুরিয়া থানা বিএনপির একটি মিছিল গোলকমনি পার্ক এলাকা থেকে শুরু হয়ে সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে পিকচার প্যালেস মোড় পৌঁছালে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। এ সময় যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী রক্তাক্ত জখম হন। রক্তাক্ত কর্মীদের নিয়ে মিছিলকারীরা সমাবেশস্থলে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত দলীয় কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শীর্ষ নেতারা তাদেরকে শান্ত করে সমাবেশের কাজ চালিয়ে যান। বিকেল ৫টার দিকে শতাধিক ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডার দেশীয় অস্ত্র, রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে বিএনপি অফিসের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় থানায় মোড়ে অবস্থানরত বিএনপি কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান শুরু করে। তখন ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ধেয়ে আসে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা ব্যাপক ভাঙচুর ও তান্ডবলীলা শুরু করলে পুলিশ তাদের সাথে যোগ দেয়।
অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা এ সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিএনপির মঞ্চ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। কিন্ত সে আহ্বানে কর্ণপাত না করে পুলিশ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সাথে মিলিত হয়ে বিএনপি কর্মীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত মঞ্চ, সমাবেশস্থলের শতাধিক চেয়ার, আশপাশের অফিস ও প্রতিষ্ঠানের দরজা জানালার গ্লাস, ফুটপাতের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পিকচার প্যালেস, স্যার ইকবাল রোড, থানার মোড়, বাজার কালিবাড়ি, হেলাতলা, হেরাজ মার্কেট, স্টেশন রোডসহ গোটা এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলের শ শ বিক্ষুব্ধ কর্মী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এ সময় রাজপথে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন মহানগর বিএনপির সম্মানিত সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা আলহাজ রকিবুল ইসলাম বকুল। কিন্ত পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের সহিংসতা কর্মীদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। এ সময় নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, নগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির সহ শীর্ষ স্থানীয় নেতারা সহিংসতা পরিহার করতে পুলিশের প্রতি আহবান জানান।
বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় সোয়া ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিএনপি অফিসের দরজার তালা ভেঙ্গে একের পর এক নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, মহিলা দল সভাপতি আজিজা খানম এলিজা, ডুমুরিয়া বিএনপির সরোয়ার হোসেন সহ অন্তত ২০ জনকে আটক হন।
ঘটনার প্রতিবাদে বড় বাজার ও হেলাতলা এলাকায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী ও মহানগর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ পারভেজ বাবু মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এক পর্যায়ে মিছিলটি পুলিশের মুখোমুখি হলে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মাসুদ পারভেজ বাবুর পা লক্ষ্য করে পুলিশের এক সদস্য টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

তীব্র নিন্দা বিএনপির, আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রেস কনফারেন্স
খুলনায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত থাকবেন।