অস্তিত্বহীন ওটি ম্যানেজমেন্টে লোপাট আড়াই লাখ টাকা

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের অস্তিত্বহীন অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ব্যবহৃত কাপড় পরিষ্কারের নামে প্রায় আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি জেনে- বুঝেও এই বিল পাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গেল ২০২১ সালের জুলাই মাসে এমন একটি ভূতুড়ে বিল দেখিয়ে তৎকালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিউটি লন্ড্রি বিশাল অংকের এই টাকা উত্তোলন করে। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যশোর-২৫০ শয্যা হাসপাতাল চত্বরে করোনারি কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট স্থাপনের পর থেকে সেখানে কোনো অপারেশন থিয়েটার যুক্ত হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিউটি লন্ড্রি সেখানকার অপারেশন থিয়েটারের কাপড় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করার নামে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৫ টাকা উত্তোলন করে। প্রতিষ্ঠানের ভূতুড়ে বিলপত্রে দেখা যায়, প্রতি পিস ৩২ টাকা করে ১ হাজার ৩৮১টি ড্র শিট পরিষ্কার বাবদ ৪৪ হাজার ১৯২ টাকা, ৩০ টাকা করে ৯৯৮টি মব পরিষ্কার বাবদ ২৯ হাজার ৯৪০ টাকা,, ৩০ টাকা করে ৮৫৫ টি অপারেশন গাউন ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা, ৩০ টাকা করে ৪৯২ টি অ্যাব শিট ১৪ হাজার ৭৬০ টাকা, ২৯ টাকা করে মোট ২৮৯ পিস জামা ৮ হাজার ৩৮১ টাকা, ২৫ টাকা করে ২৩৮ পিস পাজামা ৫ হাজার ৯৫০ টাকা, ১ টাকা করে ৬ পিস বড় তোয়ালে পরিষ্কার বাবদ দেখানো হয় ৬ টাকা। যার সবগুলোই অপারেশন থিয়েটারের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালসহ করোনারি কেয়ার ইউনিটের কর্তব্যরত সেবিকারা। গত বুধবার এই প্রতিবেদক ইউনিটে কর্তব্যরত কয়েকজন সেবিকার সাথে কথা বলেন। তারা জানান এগুলো অপারেশন থিয়েটারের। ধোপা থেকে আমাদের এখানে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কম্বল, এবং পর্দা পরিষ্কার করে সাপ্লাই দেওয়া হয়।  জুলাই মাসের ওই বিলে করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮টি শয্যার বিপরীতে ২ হাজার ৮৬৪টি বিছানার চাদর পরিষ্কার বাবদ ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৬০ টাকা দেখানো হয়। প্রতিপিস বিছানার চাদর পরিষ্কারের মূল্য তালিকা দেখানো হয়েছে ৪০ টাকা। এতগুলো বিছানার চাদর যশোর জেনারেল হাসপাতালের সব শয্যা মিলে আছে কিনা তা নিয়েও কর্তব্যরত সেবিকারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ১০ টাকা করে ৫১০টি উলের কম্বল ৫১০ টাকা, ১ টাকা করে মোট ৩৪২ টি বালিশের কভার ৩৪২ টাকা এবং ১০ টাকা করে ২ টি মশারি পরিষ্কার বাবদ ২০ টাকা দেখানো হয়। মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৫ টাকার বিল দেখানো হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০২৩ সালের একটি মাসের করোনারি কেয়ার ইউনিটের একই কাজে বিল দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ১২০ টাকা। এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তৎকালীন হিসাবরক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিল সাবমিটের সময় ভুল করে। সেখানে তারা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের স্থানে করোনারি কেয়ার ইউনিট ব্যবহার করে। অবশ্য তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০২১ সালে করোনাকালীন ওখানে একটা অপারেশন থিয়েটার ছিল এবং অপারেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটে কোনো অপারেশন থিয়েটার ছিল কি- না এমন প্রশ্নে হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশীদ বলেন, সেখানে কোনো অপারেশন থিয়েটার নেই বর্তমানে। পূর্বেও ছিল না। বুধবার ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বিউটি লন্ড্রি নামের ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোতলেব হোসেন বাড়িতে। পরে তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ঘটনা। বিষয়টি দেখতে হবে। আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি- এই বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।