নদ-নদী রক্ষায় বহুমুখী প্রকল্প প্রয়োজন

0

এককালের কীর্তিনাশা নামে অভিহিত উত্তাল প্রমত্তা পদ্মা । এখন অনেক স্থানে মৃতপ্রায়। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় চর জমে অগণিত ছোট ছোট খালে পরিণত হয়েছে বিশাল নদীটি। পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত বড়াল, আত্রাই, গড়াইসহ উত্তরাঞ্চলের ৮৫টি নদনদী বর্ষা শেষে হয়ে পড়ে প্রায় পানিশূন্য। একদিকে ভারতের অংশে সৃষ্ট ক্ষরণ বাঁধ ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব; অন্যদিকে উভয় দেশে চাষাবাদে নিমিত্ত ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নদনদীগুলোর এহেন করুণ দূরবস্থার জন্ম দিয়েছে। পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে নদীর পানির গভীর যোগসূত্র রয়েছে। ভূগর্ভের পানি নদীতে এবং নদীর পানি ভূগর্ভে প্রায়ই রিচার্জ হয়ে থাকে। বজায় রাখে পানির স্তরের ভারসাম্য। জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন, অনাবৃষ্টিসহ ভূগর্ভস্থ পানি চাষাবাদ ও অন্যান্য কাজে বহুল ব্যবহারের কারণে ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে পানির প্রাকৃতিক ভারসাম্য। নদনদীগুলোর ভরাট, দখল ও দূষণও এর জন্য কম দায়ী নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদনদীর সুরক্ষাসহ সারাবছর নাব্য রাখার ব্যবস্থা এবং ভূপৃষ্ঠের পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সর্বোপরি সেচকাজে পরিমিত পানির ব্যবহারই রক্ষা করতে পারে নদনদীর প্রবাহসহ ভূগর্ভের পানির স্থিতিশীলতা। তাদের মতে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে উত্তরবঙ্গের মরু প্রবণতা প্রতিরোধ করা ক্রমশ দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। এর বিরূপ প্রভাব এই অঞ্চলেও পড়বে। সূত্র মতে, জনশ্রুতিতে বাংলাদেশে আট শতাধিক নদীর কথা শোনা গেলেও বর্তমানে কায়ক্লেশে টিকে আছে ৭১০টি। এর মধ্যে ৩শ’ বড় নদী এবং ৪শ’ শাখা ও উপনদী। তবে ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৫৩টি ভারত থেকে মিয়ানমার থেকে ৩টি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি নদী আছে। সত্যি বলতে কি, কোনটির অবস্থাই ভাল নয়। ফারাক্কা-গজলডোবাসহ নানা বাঁধ ও ব্যারাজে স্বাভাবিক প্রবাহ প্রায় অবরুদ্ধ। অপরদিকে, প্রতিনিয়ত দখল-দূষণে জর্জরিত- ভূমিদস্যু ও জনমানুষ সর্বনাশ করছে। সংবাদ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নদীর প্রবাহ সচল রাখাসহ নদী রক্ষায় ন্যূনতম সচেতনতা নেই বললেই চলে। যে কারণে ইতোমধ্যেই শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলোরও যায় যায় অবস্থা। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। মরে যাচ্ছে গাছপালা। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ নিসর্গ প্রকৃতি। রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে মৎস্য প্রজাতি, প্রাণিকুল ও জীববৈচিত্র্য। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমরা মনে করি, সরকার তার কূটনৈতিক সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নদী ও উপকূল রক্ষা করবে। প্রয়োজনে বহুমুখী প্রকল্প নিতে হবে।