অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে ডিআইজি মিজানকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ঘুস লেনদেনের মামলায় অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে খালাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ডিআইজি মিজানুর রহমান ঘুস লেনদেনের মামলায় দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় তিন বছরের দণ্ড পেলেও তার বিরুদ্ধে আনা অর্থপাচারের অভিযোগে খালাস পেয়েছেন। আজ ওই রায়ের অর্থপাচার আইনের ৪ ধারায় খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
তিনি জানান, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় খন্দকার এনামুল বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তাই রায়ের এই অংশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল আবেদন করেছে। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন। রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
মিজানের রায়ে বিচারক বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দুই ধারার অপরাধ একই ধরনের হওয়ায় তাকে একটি ধারায় অর্থাৎ ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। বাছিরের রায়ে বিচারক বলেন, বাছিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, মানিলন্ডারিং আইন ও দুদক আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে মানিলন্ডারিং আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ৪০ লাখ টাকার ঘুস কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। গত বছরের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার থাকা কালে বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়। এরপর নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ওই বছরের ২৪ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। মামলার তদন্তকালে ডিআইজি মিজান অভিযোগ করেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে এনামুল বাছির তার কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নেন। এ অভিযোগ ওঠার পর এনামুল বাছিরকে সরিয়ে দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুস লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শেখ মো. ফানাফিল্যাকে প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তিন সদস্যের একটি দলকে।