ভ্যাট প্রত্যাহার, ২০ শতাংশ দাম কমবে কি?

0

শফিকুল ইসলাম॥ আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার ওপর থেকে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেজন্যই এসব পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করায় এসব পণ্যের দাম ২০ শতাংশ কমছে কিনা এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। ক্রেতারা কবে থেকে সরকারের শুল্ক প্রত্যাহারের এই সুবিধা পাচ্ছেন? আদৌ পাবেন কিনা?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখন উচ্চ দামে লাগামহীনভাবে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। প্রতিলিটার সয়াবিন তেল এখন কমবেশি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় পিছিয়ে নেই চিনি এবং মসুর ডাল। শবে বরাত ১৮ মার্চ পালিত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দৌড়ে অংশ নেবে ছোলা। সব মিলিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের কাছে সুখবর হচ্ছে, এসব পণ্যের ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার। জনগণের প্রত্যাশা, প্রতিটি পণ্যের দাম তাহলে শতকরা ২০ টাকা কমছে। এখন তাদের প্রশ্ন, কবে থেকে বিদ্যমান দামের তুলনায় ২০ শতাংশ কম দামে এসব পণ্য তারা কিনতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। মূলত রমজান মাসে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন, সেসব পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার হয়েছে। কারণ, সবাই এগুলোর ভোক্তা। সয়াবিনের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মোট ২০ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে এসব পণ্যের দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমবে বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রেজওয়ান আহসান জানিয়েছেন, সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এর সুবিধা যদি সাধারণ মানুষ না পেয়ে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী পায় তাহলে তো আর কিছু হলো না। তিনি জানান, ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে সরকার রাজস্ব হারাবে। একদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি, অপরদিকে যদি সাধারণ মানুষ এর সুবিধা না পায় তাহলে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে লাভ কী? মানুষ যাতে এর সুবিধা পায়, উপকৃত হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ব্যবসায়ীরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য আমদানি করে এর সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেবে। এটি সরকারকে মনে রাখতে হবে।
জানতে চাইলে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে যেসব পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেসব পণ্য তো ভ্যাটসহ বেশি দামে কেনা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে শুনেছি, তবে এখনই ক্রেতারা এই সুবিধা পাচ্ছেন না। আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য বাজারজাত করার পর এই সুবিধা ক্রেতারা পাবেন। তার আগে নয়। কবে নাগাদ এই সুবিধা ক্রেতারা পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা নির্ভর করছে ভ্যাটমুক্ত পণ্য কবে আসছে তার ওপর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে তো সময় লাগে না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল হোসেন জানান, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটাই নিয়ম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পণ্যের দাম সহনীয় রাখার দায়িত্ব শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একার নয়। এ কাজের জন্য একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা কাজ করছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম অবশ্যই বিষয়টি তদারকি করবে।