কেশবপুরে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ : চিকিৎসায় ভরসা কবিরাজ

0

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর) ॥ কেশবপুরে গরুর লা¤িপ স্কিন ডিজিজ (পক্স জাতীয়) ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগ নিরাময়ে গরুর মালিকরা কবিরাজের ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। উপজেলার পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও হাসানপুর ইউনিয়নসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে। প্রাণিস¤পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গরুর লা¤িপ স্কিন রোগের এখনও পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরুর এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসা দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় গরুর মালিকরা কবিরাজের ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছেন। ঝাড়ফুঁকের পাশাপাশি নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে রস খাওয়ানো হচ্ছে। অনেকে আক্রান্ত গরুর গায়ে নিমপাতাও বেঁধে রাখছেন।
প্রাণিস¤পদ অফিস সূত্র জানায়, এ রোগ সারতে যারা কবিরাজি চিকিৎসার পাশাপাশি নিম নিশিন্দার পাতা জড়িয়ে ভালো করার চেষ্টা করছেন তারা ভুল করছেন। আক্রান্ত গরু প্রাণিস¤পদ অফিসের পরামর্শে চিকিৎসা করানো উচিত। দ্রুত চিকিৎসা না করালে আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।
উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামের কৃষক জয়দেব বলেন, তার একটি গাভী ও একটি বাছুর লা¤িপ স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বাছুরটি প্রায় ২০ দিন আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়েও কোন কাজ হয়নি। গাভীটিও ১০দিন আক্রান্ত হয়ে রয়েছে। বাছুরটির হাটু ফুলে এখন রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। ওষুধে কাজ না হওয়ায় এখন কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গরু দুটি খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, পাঁজিয়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা মনোহরনগর গ্রামের রবি কুমার ঘোষের ৩টি, সরুপ বিশ্বাসের ১টি, রেজাউল ইসলামের ২টি, মাদারডাঙ্গা গ্রামের অশোক দাসের ২টি, মোজহারের ১টি, পাঁজিয়া গ্রামের সনৎ চৌধুরির ২টি গরু লা¤িপ স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর লা¤িপ স্কিন ডিজিজ রোগ রোধে কেশবপুর উপজেলা প্রাণিস¤পদ অফিস থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হাটবাজারে মাইকিংসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৪০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সুফলাকাটি ইউনিয়নের পল্লি প্রাণি চিকিৎসক গোলাম কিবরিয়া মনি বলেন, সুফলাকাটি ইউনিয়নে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ গরু লা¤িপ স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি শুক্রবার ১০টি বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিয়েছেন। প্রতিদিনই এভাবে চিকিৎসা চলছে। হাসানপুর ইউনিয়নের পল্লি প্রাণি চিকিৎসক আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, তার ইউনিয়নে ৫০ ভাগ গরু এ রোগে রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি শুক্রবার ৩টি বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিয়েছেন।
পাঁজিয়া গ্রামের কবিরাজ সোহরাব হোসেন গাজী বলেন, তিনি এ রোগে আক্রান্ত গরুর ঝাড়ফুঁকের পাশাপাশি নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে রস খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা দেন। তিনি সম্প্রতি শতাধিক গরুর এভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন। তার দাবি, এ চিকিৎসায় গরু ভালো হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, লা¤িপ স্কিন ডিজিজ জাতীয় রোগ মশা-মাছি থেকে ছড়ায়। এ রোগের এখনও পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। আক্রান্ত গরু ভালো হতে অনেক সময় লাগে। সাধারণ চিকিৎসা দিয়েই আক্রান্ত গরু ভালো করা হচ্ছে। দ্রুত ডাক্তারি চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। যারা আক্রান্ত গরুর কবিরাজি চিকিৎসা করাচ্ছেন, তারা ভুল করছেন। প্রাণিস¤পদ অফিসের পরামর্শে চিকিৎসায় এ রোগ ভালো হচ্ছে। গরুর এ রোগ স¤পর্কে ঢাকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।