তদন্ত কর্মকর্তার ‘দুঃসাহস’ নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আদালতের রায় লঙ্ঘন করে বাদীর এজাহারকে আমলে না নিয়ে সৃজনকৃত এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত সম্পন্ন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যার ওপর শুনানিকালে রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। এদিন তলব আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে হাজিরা দেন তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তার। তবে তিনি আদালতে সন্তোষজনক বক্তব্য দিতে পারেননি। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান আদালতে বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে।তখন আদালত বলেন, আপনি তো হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আপনি (তদন্ত কর্মকর্তা) যেভাবে তদন্ত করেছেন তাতে আসামিদের সাহায্য করে মামলার বাদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। যেখানে হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সেটাকে লঙ্ঘন করে আপনি মনগড়া তদন্ত করেছেন। কেন এত বড় দুঃসাহস দেখিয়েছেন?
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর পুঠিয়ার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন নুরুল ইসলাম। নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে তাকে ২০১৯ সালের ১০ জুন হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা আট জনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু সেই এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে ছিঁড়ে ফেলে দেন ওই থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেরাই একটা এজাহার বানিয়ে করে তা থানায় লিপিবদ্ধ করেন। যা পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আদালত প্রত্যাশা করে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার মামলাটি তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা/সংস্থাকে অবিলম্বে কেসটি পিবিআইর নিকট হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে সংবাদদাতার মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান রিপোর্ট ও উক্ত অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা না মেনেই তদন্ত সম্পন্ন করেন পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তার। এদিকে একই মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবু জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে আদালতের নির্দেশনা না মেনে তদন্ত করার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তারকে তলবের পাশাপাশি এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছিল।