পুলিশ ভেরিফিকেশনে দীর্ঘ সূত্রিকা কাম্য নয়

0

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা। মামলা জটিলতা ও আরো কিছু কারণে প্রায় দুই বছর ধরে নিয়োগ কার্যক্রম এক রকম বন্ধ রয়েছে। সে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। ছয় মাস আগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ৩৮ হাজার ২৬৮ জন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের প্রাথমিক সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও থমকে আছে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট না আসায়। অথচ, শিক্ষকের অভাবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তার দায় কে নেবে?
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজে সীমিত পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও করোনার নতুন ঢেউ হানা দিতে পারে এবং আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার এই সীমিত সময়টাতেও শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আবার যাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছেন, তাঁরাও নিয়োগ না হওয়ায় যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। জানা যায়, শুধু এই ৩৮ হাজারই নয়, পুলিশ ভেরিফিকেশনের অভাবে আরো অনেক শিক্ষকের নিয়োগই মাঝপথে আটকে আছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার ১৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সে সব প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। অবশেষে শর্ত সাপেক্ষে এসব শিক্ষকের পদায়ন দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগ। যোগদানের পর তাঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শেষ করা হবে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৪ অক্টোবর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে দুই শতাধিক প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল। তাঁদেরও যোগদানের পর ভেরিফিকেশনের শর্তে নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনে কেন এত সময় লাগছে সে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে এবং তা হতে হবে খুবই সংক্ষিপ্ত।
কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বা শিক্ষার সময় বসে থাকে না। করোনা মহামারি শিক্ষার্থীদের সেই জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। এখন শিক্ষক নিয়োগের অভাবে সেই জীবন আরো ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনোভাবেই কাম্য হবে না। আমরা আশা করি, প্রাথমিকভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা ৩৮ হাজার ২৬৮ জন প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন অতি দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনে পুলিশ বিভাগকে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। একইভাবে ৯০ হাজার খালি পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও দ্রুততর করতে হবে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সবই করতে হবে।