চাল নিয়ে ভারতের চালবাজি

0

চাল আমদানি নিয়ে দুর্নীতির খবর প্রায়ই জানতে পাওয়া যায়। আমদানির নামে নিম্নমানের চাল গছিয়ে দিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল জালিয়াতি করে। সরকারে লুকিয়ে থাকা একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের যোগসাজশে এমনটি ঘটে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ ও পচা চাল আমদানির বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে ভারত থেকে। ব্যক্তিপর্যায়ে কোনো রফতানিকারক দুর্নীতিবাজের সহায়তায় এমনটা ঘটালে বিস্ময়কর মনে হবে না। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিম্নমানের চাল রফতানি করছে। ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণ হওয়ার পরও ভারতীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ গো ধরেছে বাংলাদেশ যেন নিম্নমানের চালই গ্রহণ করে। একটি দৈনিকের খবরে প্রকাশ, ভারতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (নাফেদ) ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি করে। জিটুজি পর্যায়ে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় নাফেদ দ্বিতীয় চালানে ১৯ হাজার ২০০ টন চাল পাঠায়, যা ভারতের বিশাখাপত্তম থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে। নিয়ম অনুযায়ী, নমুনা সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এরপর চাল খালাস শুরু হয়। তিন হাজার ২৮৯ টন চাল খালাস করে উপজেলাপর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি গুদামে পাঠানো হয়। চালের মান নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে আবার নতুন করে জাহাজের বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা চাল সত্যিই নিম্নমানের। তখন খাদ্য বিভাগ থেকে এ চাল নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাফেদকে জানানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে প্রথমবার যখন চাল পরীক্ষা করা হয়; তখন কেন নিম্নমানের বিষয়টি জানা যায়নি। তাহলে কি প্রথমবারের নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল? তখন কি শুধু ভালো চাল থেকে নমুন দেয়া হয়েছিল?
আরো ৫০ হাজার টন আতপ চাল সরবরাহ করতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি করেছে নাফেদ। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার টন সরবরাহ করেছে। অন্য দিকে সিদ্ধ চালের ৫৩৪ টনও সরবরাহ করেছে। ওই সব চালের মান কেমন এখন তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দেয়া স্বাভাবিক। চুক্তি অনুযায়ী আরো বেশ কিছু চাল সরবরাহ করবে নাফেদ। হিসাব মতে, শর্ত ভাঙার কারণে চুক্তি বাতিল বা জরিমানা গোনার কথা। এ অবস্থায় সিদ্ধ চালের চালানের বাকি অংশ যা নিম্নমানের বলে প্রমাণ হয়েছে; তা নিয়ে নাফেদ আবদার করছে। ধরনা দেয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে, নিম্নমানের হলেও যেন বাংলাদেশ এগুলো গ্রহণ করে। এ চাল নিয়ে এমভি ড্রাগন নামের যে জাহাজটি ২২ জুলাই বন্দরে এসেছিল নিম্নমানের চালের কথা ফাঁস হওয়ার পর জাহাজটিকে বহিঃনোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাহাজটি চলে না গিয়ে বহিঃনোঙরে অবস্থান করছে। চাপাচাপি করা হচ্ছে এসব চাল যেন গ্রহণ করা হয়।
ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নাফেদ দেশটির কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করে থাকে। পাশাপাশি গরিব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়া দেশগুলোকে খাদ্য সহযোগিতা দেয়ার কার্যক্রমও চালায়। এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যখন চাল সরবরাহ করছে তখন সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আর আমদানিকারক হিসেবে আমাদের খাদ্য বিভাগের প্রথম টেস্টেই নিম্নমানের বিষয়টি ধরা না পড়া এবং খাদ্যগুদামে পাঠানোর পর জানতে পারার মধ্যে ঘাপলাটা বোঝা যাচ্ছে। ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করা উচিত ছিল; কিন্তু তা না করে নিম্নমানের চাল গ্রহণে জোরাজুরি করায় দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে অসঙ্গতির লক্ষণ ফুটে ওঠে।