কুষ্টিয়ায় সাবিনা ধর্ষণ-হত্যা: শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে ২০০৪ সালে কিশোরী সাবিনাকে (১৩) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তার আইনজীবীর করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৯ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা। এর আগে গত ৭ নভেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পুলিশের আইজি ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে আসামি শুকুর আলীকে আইনি প্রক্রিয়া মেনে রিভিউ আবেদন করতে বলেছেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। পরে সেটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্যে আসে।
আইনজীবী জানান, গত ১৮ আগস্ট শুকুর আলীকে হাইকোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। এখনো ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি। রায় প্রকাশ হলে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) সুযোগ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে রায়টি কার্যকরে তোরজোড় শুরু হয়। তাই রায়টি স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত স্থগিতাদেশ দেন। আদালতে ওইদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আসামিপক্ষের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ মামলায় অন্য তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ের অগ্রিম অর্ডার পেয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনও পাঠানো হয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন বাতিল করে দেন। তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগের কথা আমাদের জানানো হয়। আমরা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ও রিভিউ আবেদন দায়ের করার কথা জানায়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে তো ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না। এরপর রিভিউ আবেদনের সুযোগও আসামিকে দিতে হবে। আমরা আপিল বিভাগে এসব কথা বলেছি। আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন। জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে সাবিনা (১৩) নামের এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ১৮ আগস্ট তিনজনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ওই তিন আসামি হলেন- নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেন। তাদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তর করতে নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের আব্দুল মালেক ঝনুর মেয়ে সাবিনাকে (১৩) অপহরণ করে আসামিরা। পরে লালনগর ধরমগাড়ী মাঠের একটি তামাক ক্ষেতে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন সাবিনার বাবা আব্দুল মালেক ঝনু বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড দেন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর হোসেন। পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এর মধ্যে কামরুল নামের এক আসামি মারা যান। পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে যান।