এনবিবিএল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারে এনবিসিসিআই’র উদ্বেগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড (এনবিবিএল) থেকে আইএফআইসি ব্যাংক’র বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নেপাল বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনবিসিসিআই)। বিনিয়োগ প্রত্যাহারের আইএফআইসি ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে নেপালের ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বিএনসিসিআই’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি দিয়ে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। চিঠিতে তারা হিমালয় কন্যা নেপালে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পক্ষে বেশ কিছু আবেগাপ্লুত যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নেপালি ব্যবসায়ীরা এবং বাংলাদেশের আইএফআইসি ব্যাংক মিলে যৌথ উদ্যোগে এনবিবিএল ব্যাংক গঠন করা হয়েছিল। এতে এখনো সরকারের এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার রয়েছে।
নেপালের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে, নেপাল বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এনবিসিসিআই) সভাপতি এলবি শ্রেষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখেছেন। এ চিঠিতে তিনি আইএফআইসি ব্যাংক নেপালি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যাতে পুনর্বিবেচনা করে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মাননীয়, এনবিবিএল এর প্রতিষ্ঠা নেপাল এবং বাংলাদেশের জনগণকে অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের নাম এখন এদেশে অনেক বেশি পরিচিত। হাজার হাজার নেপালির জনগণের কাছে এটি এখন প্রতিদিনের নাম হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি নেপালের সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’
এনবিসিসিআই’র সভাপতির চিঠিতে বলা হয়েছে যে, এনবিবিএল এখন শহর থেকে গ্রামে ১০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। এখানে পাঁচ লাখের বেশি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
এ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সংক্ষেপে বলতে গেলে, লোকেরা নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে একে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ বলে চেনে। ব্যাংকটি খুব ভাল করছে এবং বিনিয়োগকারীদের খুব ভাল বার্ষিক রিটার্ন দিচ্ছে। এর ফলে আইএফআইসি ব্যাংক প্রতি বছর লভ্যাংশ হিসাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।’
চিঠিতে এলবি শ্রেষ্ঠা আরও বলেছেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংক নেপাল থেকে বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিয়ে নেপালের বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের শেয়ার বিক্রি করার কথা ভাবছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই সময়ে শেয়ার বিক্রি করা আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত হবে না, কারণ শেয়ারের দাম বাড়ছে। আগামী বছরের মধ্যে এর সূচক দ্বিগুণ অতিক্রম করবে। অন্যদিকে, নেপাল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার দুই দেশের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য ভাল বার্তা বহন করবে না।’
‘নেপালের ব্যাংকিং খাত থেকে বাংলাদেশের নাম চিরতরে মুছে যাবে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার ব্যাপারেও সাধারণ মানুষের আস্থাকে প্রভাবিত করবে।’
এ অবস্থায়, সমগ্র ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং নেপালের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এলবি শ্রেষ্ঠা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আইএফআইসি ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পদক্ষেপ সদয় পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
একসময় ব্যাংকটি কিছুটা নাজুক অবস্থায় পড়েছিল। সে সময় ব্যাংকটিকে টেনে তোলার জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদকে। তার মেধা ও শ্রম দিয়ে ব্যাংকটিকে অনেকটা জনপ্রিয় করে তুলেন সেই সঙ্গে ব্যাংকটি সংকটকাল কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হয়।
ব্যাংকটি থেকে আইএফআইসি তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএফআইসি’র বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা সম্পূর্ণ তাদের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে নেপালে ব্যাংকটি ভাল করছিল। এ মুহূর্তে দেশটি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষতি হবে তা নিয়েও কোন মন্তব্য করবো না। তবে বিষয়টি নেপালের জন্য ক্ষতি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য নেপাল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্টের চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সেভাবেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’