একই ভুল, একই পরিণতি

0

রবিউল ইসলাম॥ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর ঢালাও পরিবর্তনের ফলটাও হাতেনাতে পেলো বাংলাদেশ। প্রত্যাশিত শুরু তো হলোই না, উল্টো একই ভুলে ভরা দৃশ্য মঞ্চস্থ হলো মিরপুরের ২২ গজে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর বোলারদের ছন্নছাড়া বোলিং আর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর নেতিবাচক অধিনায়কত্ব- সব মিলিয়ে আরেকটি হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির এই হারটা আরও শোচনীয়ও হতে পারতো। যদি না মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার নুরুল হাসান-মেহেদী হাসান দৃঢ়তা দেখাতেন। তাদের ব্যাটে ভর করেই কোনও রকমে ১২৭ রান পার করেছে বাংলাদেশ। তবে স্বস্তির জায়গা হলো স্বল্প পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ লড়াই করতে পেরেছিল দারুণ বোলিংয়ের কল্যাণে। কিন্তু শেষ দিকে এই বোলিংটাই হয়ে পড়ে নখদন্তহীন! বিশেষ করে মোস্তাফিজের ব্যয়বহুল বোলিংয়ে ৪ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের আগে ঠিক একই উইকেটে বাংলাদেশ খেলে প্রস্তুতি নিয়েছিল। উইকেটের সুবিধায় বাংলাদেশ দল জিতেছিল সিরিজও। কিন্তু সেই জয়ের আত্মবিশ্বাস বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আশা করা হচ্ছিল, পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা অন্তত স্পোর্টিং উইকেটে হবে। সেই কথা বিবেচনা করলে আজকের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল বলা চলে। কিছুটা স্লো হলেও অতটা টার্ন ছিল না। পেসারদের পাশাপাশি ব্যাটারদের জন্য দারুণ কিছু করার সুযোগও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা বরাবরের মতো আজকের ম্যাচেও দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হয়েছেন।
অন্য ব্যাটারদের চেয়ে কিছুটা ধারাবাহিক নাঈমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে যুক্ত করা হয়েছিল সাইফ হাসানকে। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেললেও রঙিন পোশাকে এই প্রথম তার মাঠে নামা। কিন্তু টেস্টের মতো এই ফরম্যাটেও হাসলো না সাইফের ব্যাট। ৮ বলের ইনিংসে প্রতিটি বলেই অস্বস্তি নিয়ে খেলেছেন। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে ফখর জামানকে ক্যাচ দিয়েই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। বিশ্বকাপে মোটামুটি রান করা নাঈম দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরেছেন সাজঘরে। অনেক দিন পর সুযোগ পাওয়া শান্তকে শুরু থেকে স্ট্রাগল করতে দেখা গেছে। তিনিও ১৪ বল খেলে ৭ রানে আউট হয়েছেন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তো আউট হয়েছেন অদ্ভুতভাবে! মোহাম্মদ নওয়াজের একটি বল অফস্টাম্প ছুঁয়ে বের হয়ে যায়। শুরুতে বেল না পড়লেও কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বেল পড়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের। আর তাতেই বিদায় নিশ্চিত হয় তার। ৪০ রানে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটার আউট হলেও উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কতটা ভালো ছিল, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন আফিফ-সোহান-মেহেদীরা। এই তিন ব্যাটারের দায়িত্বশীল ইনিংসেই বাংলাদেশ ১২৭ রান করতে পেরেছে। আরেকটি বিষয়ও উল্লেখযোগ্য, এই তিন ব্যাটারসহ কেবল তাসকিন বাউন্ডারির দেখা পেয়েছেন নিজেদের ইনিংসে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের আর কেউ একটি বলও সীমানা-ছাড়া করতে পারেননি। এরপরেও এত অল্প পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের শুরুটা আশা জাগানিয়া ছিল। কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর নেতিবাচক অধিনায়কত্ব আর শেষ দিকে বোলারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বোলিং সেই অবস্থানটা ধরে রাখতে দেয়নি! এমনকি লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকেও ব্যবহার করা হয়েছে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে! পঞ্চম বোলার হিসেবে এই লেগ স্পিনার সুযোগ পেয়েছিলেন। অথচ পাকিস্তান যখন জুটি বাঁধছিল, তখন তাকে না এনে মাহমুদউল্লাহ নিজে বোলিংয়ে এসে প্রতিপক্ষের চাপ কমিয়ে গেছেন। দলে যে একজন লেগ স্পিনার আছে, সেটি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন অধিনায়ক। যখন আনলেন, তখন ম্যাচ প্রায় শেষ। শেষ ওভারে আমিনুলের দুই বলে এক ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। অবশ্য ভুলে ভরা ম্যাচে মোস্তাফিজ চাইলেই নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের কাছে রাখতে পারতেন। শুরুর দিকে ভালো বল করলেও স্লগ ওভারে এসে তার বারবার খেই হারানো চোখে পড়েছে বেশি। বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচেই এমনটা দেখা গেছে। অথচ মিরপুরের চেনা উইকেটে মোস্তাফিজকে নিয়ে বড় আশা ছিল। প্রথম দুই ওভারে সেই প্রত্যাশা পূরণও করেছিলেন। কিন্তু শেষ দুই ওভারে মোস্তাফিজ ব্যয়বহুল হওয়ায় মূলত ছিটকে গেছে বাংলাদেশ।