কিন্ডারগার্টেন বাঁচাতে হবে

0

করোনাকালে অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। শিক্ষার্থীরা গত দেড় বছর ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়েছে। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়। স্কুল খোলা যায়নি বিধায় বার্ষিক পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্ডারগার্টেন। গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের সমস্যার মুখ পড়ে। নিজেদের আয় থেকে চলে, এমপিও বা সরকারি কোনো সহযোগিতা পায় না, এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন এমন অনেকে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। মুদি দোকানে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার ভ্যানে সবজি বিক্রি করতে নেমেছেন। শিক্ষক হিসেবে এলাকায় সম্মানিত অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক ফার্নিচার বিক্রি করে শিক্ষকদের বকেয়া বেতন ও বাড়িভাড়া মিটিয়েছেন। অনেকে স্কুল তুলে দিয়ে মেস ভাড়া দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যেমন ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন, তেমনি অনেক শিক্ষার্থীও যুক্ত হয়েছে শিশুশ্রমে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্য বলছে, দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে ১০ হাজার আর শিক্ষা কার্যক্রমে যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও নতুন সংকট দেখা দিতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। যেসব শিক্ষক পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন, তাঁরা আর এই পেশায় না-ও ফিরতে পারেন। আবার বন্ধ থাকা অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাবে এমন সম্ভাবনাও নেই। এ ছাড়া শহর থেকে অনেক পরিবারই করোনার অভিঘাতে গ্রামে চলে গেছে। এই পরিবারগুলো নতুন করে শহরে না-ও ফিরতে পারে। এসব পরিবারের শিক্ষার্থীরা আর কিন্ডারগার্টেনে ফিরবে না। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাদের শিক্ষাজীবন হয়তো নতুন করে শুরু হবে।
কিন্ডারগার্টেনগুলো দেশের শিক্ষা খাতে বড় ভূমিকা রাখছিল। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছিল এসব প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু করোনার অভিঘাতে এই খাতটি একেবারেই বিপর্যস্ত। এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি কখনো হতে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠানকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কিন্ডারগার্টেনগুলো পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।