দুর্নীতির কোপানলে উচ্চশিক্ষা

0

শিক্ষা এখন মানুষকে সৎ, নীতিবান, আদর্শবাদী করে? নাকি অনৈতিক-দুর্নীতিবাজ করে এই প্রশ্ন এখন সবমহলে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা হচ্ছে, তাতে এমন প্রশ্ন না উঠাই অস্বাভাবিক। অথচ, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে উচ্চতর জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার কথা। এখানে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, সাধারণ মানুষের কাছে তাঁরা সকলেই সম্মানীয় ব্যক্তি। আর যাঁরা উপাচার্য নিযুক্ত হন, তাঁরা আরো অগ্রসর গণ্য মানুষ। অথচ, একের পর এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তি বা দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসির তদন্তেও দুর্নীতির অনেক অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক খবরে চৌর্যবৃত্তির নানাবিধ খবর বেরিয়েছে। একটি খবরে বলা হয়েছে- পাড়া-মহল্লার স্যানিটারি অথবা হার্ডওয়্যারের দোকানে যে হোসপাইপ পাওয়া যায় প্রতি ফুট ১৮ থেকে ২০ টাকায়, সেই হোসপাইপ গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) গবেষণা খামার, লাইভস্টক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্মের জন্য কেনা হয়েছে ৫০০ টাকা করে। শুধু হোসপাইপই নয়, এই খামারের জন্য ফ্রিজার, মিল্ক প্যাকেজিং মেশিন, প্রেগন্যান্সি ডিটেক্টর, ক্রিম সেপারেটরসহ নানা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে কয়েক গুণ বেশি দামে। এমন অনিয়ম পাওয়া গেছে আরো অনেক কেনাকাটায়ই। আরও কয়েকটি খবরে রাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ থেকে কেনাকাটায় দুর্নীতির চিত্র রয়েছে। মেডিকেলের খবরতো সবার জানা।
দেশে উচ্চশিক্ষার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অভিযোগ আছে, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার কোনো পরিবেশই নেই, সেগুলোতে শুধু সনদ বিক্রি করা হয়। অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও উচ্চশিক্ষার উপযোগী পরিবেশ নেই। গবেষণা তো নেই-ই। এখন পাওয়া যাচ্ছে দুর্নীতির দেদার অভিযোগ। নিয়োগ, নির্মাণসহ প্রায় সব কেনাকাটায় থাকে অনিয়মের অভিযোগ। কেন এমন হচ্ছে? উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, এর জন্য প্রধানত দায়ী রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ। শিক্ষকদের নৈতিকতার অবনমনও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। তাঁদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে দেশে উচ্চশিক্ষায় রীতিমতো ধস নামবে। জানা যায়, বশেমুরকৃবিতে ৩৭৫ কোটি টাকার ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। বেশি দামে কার্যাদেশ দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। শুধু যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়মই নয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের জন্য একটি পাজেরো এবং একটি টয়োটা অ্যাভেঞ্জা গাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পের টাকায় একটি নতুন মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস এবং একটি টয়োটা রাশ কেনা হয়েছে। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও জ্বালানির ব্যয় খাতেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ।
অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। লক্ষ্য আছে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার। অথচ, আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রথম এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।