মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: গ্যাস-অগ্নি দুর্ঘটনা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে

0

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ছিল একইসঙ্গে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। শর্মা হাউজ নামের একটি রেস্টুরেন্টে সংঘটিত এ বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এর বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ভবনটির নিচতলার দেওয়ালগুলো ধসে পড়ে এবং দোকানের সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েকটি ভবন প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
বেশ কয়েকটি ভবনের কাচ ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এ সময় ফ্লাইওভার এবং নিচের সড়কে যানজটে আটকে থাকা দুটি বাসসহ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। সব মিলে গোটা এলাকায় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল বলা যায়।
এ ভয়াবহ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে গতকাল বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছে, এটি কোনো সাধারণ বিস্ফোরণ নয়। ঘটনাস্থলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি মিলেছে। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জমে এ বিস্ফোরণ হতে পারে।
গ্যাস থেকে দুর্ঘটনার ঘটনা দেশে নতুন নয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে গ্যাসজনিত বিস্ফোরণে ৩০ জনেরও বেশি মুসল্লির মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওই মসজিদ এলাকায় তিতাস গ্যাসের লিকেজ ছিল এবং এ সম্পর্কে একাধিকবার তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছিল। তারপরও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। মগবাজার বিস্ফোরণের ঘটনার প্রকৃত কারণ যেহেতু এখনো জানা যায়নি, তাই আমরা আপাতত শুধু এটুকু বলতে পারি-যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ, এর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট সবারই সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হয়েছে অসংখ্য গ্যাসলাইন। এসব লাইনের কোথাও লিক হচ্ছে কিনা, কোনো ভবনের কোনো কক্ষে গ্যাস জমা হচ্ছে কিনা-এসবের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার পাশাপাশি ভবনের বাসিন্দা বা কর্মচারীদেরও দায়িত্ব রয়েছে।
মগবাজারের আকস্মিক এ বিস্ফোরণ দেখিয়ে দিল আমাদের চারপাশে কীভাবে ওঁৎ পেতে আছে মৃত্যু। উদ্বেগের বিষয় হলো, রাজধানীসহ সারা দেশে এরকম বহু ভবনই রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকাণ্ড, পুরান ঢাকায় রাসায়নিক বিস্ফোরণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিস্ফোরণ ইত্যাদি ঘটনা এর প্রমাণ। কিন্তু এত সমস্যার পরও এর সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়া এবং দেখেশুনে চোখবুজে থাকা যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং সবাই যেন দুর্ঘটনাকে নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছি।
অন্যথায় নিমতলী ও চুড়িহাট্টার বিস্ফোরণের এত বছর পেরিয়ে গেলেও পুরান ঢাকা থেকে সরানো হয়নি কেন রাসায়নিকের গুদাম ও ব্যবসা? বড় ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে এখনো বেশিরভাগ মানুষ উদাসীন; এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও চুপচাপ।
এ নির্লিপ্ততার অবসান ঘটানোর সময় এসেছে। মগবাজার বিস্ফোরণের জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।