দক্ষিণ-পশ্চিম কি ফিরে যাবে সন্ত্রাসে

0

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উথলী শাখা সোনালী ব্যাংকে ফিল্মি স্টাইলে দুঃসাহসিক ব্যাংক ডাকাতি ভাবনার বিষয়। দিন-দুপুরে দেশের জাতীয় ব্যাংকের একটি শাখায় এমন লুণ্ঠন হতবাক করেছে স্থানীয়দের, যা গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত বোধ করছেন। অতিসম্প্রতি যশোর শহরের ব্যস্ততম এলাকায় দিনের বেলা প্রকাশ্যে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সামনে ছুরি মেরে বোমা ফাটিয়ে এক গ্রাহকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। যশোরের পুলিশ অতিদ্রুত সেই অপরাধীদের চিহ্নিত ও আটক করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারও হয় ছিনতাই করা সিংহভাগ টাকা। ব্যাংকে ঢুকে এবং ব্যাংকের সামনে দিনের বেলা প্রকাশ্যে এমন লুটের ঘটনা অপরাধীদের দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেয়। অপরাধীরা তখনই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যখন তাদের ভয় পাওয়ার মতো কোন পরিবেশ তারা পায় না। তাদের নির্ভয়তার পরিবেশন তখনই তৈরি হয় যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা ফুটে ওঠে তাদের (অপরাধীদের) সামনে। অথবা তাদের দণ্ডের ভয় থাকে না।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ত্রিশ বছর আগে সন্ত্রাসী অধ্যুষিত বলে কুখ্যাতি ছিল। চরমপন্থি একাধিক দল এ অঞ্চলকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করে। খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দ্বিধা বিভক্ত ওই সশস্ত্র দলগুলো যেমন নিজেদের মধ্যে কোন্দলে মেতে থাকতো প্রতিহিংসার হত্যায়, তেমনি চাঁদাসহ বিভিন্ন দাবিতে কথায় কথায় হত্যা ও লুটের ঘটনা ঘটাতো। তাদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে যশোর ও খুলনার একাধিক প্রথিতযশা সাংবাদিককে। বামপন্থি ধারায় নিজেদের সংগঠনগুলোর নাম থাকলেও তারা মূলত স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে ও প্রশ্রয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ওই প্রভাবশালীরা এ সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডেও ব্যবহার করেছে। নব্বই দশকে তাদের নির্মমতা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জ্বলন্ত ইটের ভাটায় ফেলে হত্যার ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থায় তৎপর হয়ে ওঠে তৎকালীন সরকারগুলো। রাষ্ট্রের কঠোরতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওই সন্ত্রাস দমনে তৎপর হয়ে ওঠে। হ্রাস পেতে পেতে ক্রমশ হারিয়ে যায় দলগুলো। এখন আর চরমপন্থি কোন দলের নাম সরাসরি আসে না কোন হত্যা বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। তবে এবছর যশোর সদরের হাশিমপুর বাজার ও মণিরামপুর উপজেলার পল্লীতে দুই জন সাবেক চরমপন্থি খুন হয়েছেন। তাদের একজন ১৯৯১ সালে আত্মসমর্পণের সুযোগে আনসার সদস্য হিসেবে চাকরি করছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসে হাশিমপুর বাজারে খুন হন। অপরজন ইজিবাইক চালাতেন। সাবেক এই চরমপন্থিরা যখন বর্তমান ছিলেন তখন যাদেরকে হত্যায় অভিযুক্ত ছিলেন তাদের স্বজনদের হাতে প্রাণ দিতে হল। এছাড়া প্রতিনিয়ত নানা হত্যার ঘটনা ঘটছে এ অঞ্চলে। আবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসন্ন। স্থানীয় সরকারের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচন নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের সহিংসতার নজির রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। সব মিলিয়ে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি উদ্বেগ তৈরি করছে সাধারণে। এক্ষেত্রে খুলনা বিভাগের শীর্ষ পর্যায় থেকে আইন-শৃক্সলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তৎপরতা প্রয়োজন।