সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি

0

চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সংবাদ স্বস্তিদায়ক। দু-একদিনের মধ্যেই দেশে সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছার কথা। জানা গেছে, সিনোফার্মের প্রথম চালান দেশে পৌঁছার পর গণটিকা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করবে সরকার। অবশ্য পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে টিকাদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর প্রাথমিক পর্যায়ে দেড় কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুসারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তিও করেছিল সরকার। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও প্রথম মাসে ৫০ লাখ ও দ্বিতীয় মাসে আসে মাত্র ২০ লাখ ডোজ। এরপর থেকে আর কোনো টিকা আসেনি। এক্ষেত্রে সরকার দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর যে পরিকল্পনা করেছে, সেটি কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা কঠিন হলেও আমরা বিশ্বাস করতে চাই- দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে সরকার।
করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারানোর পাশাপাশি সংকট কাটিয়ে নতুন ছন্দে জীবন সাজানোর চেষ্টাও করছে। এর প্রতিরোধ, প্রতিকারে দেশে-দেশে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, যার সুফল এরই মধ্যে বিশ্ববাসী ভোগ করতে শুরু করেছে। বিশ্বে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিকেই সরকার এ কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে, যা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। করোনার টিকাদান কার্যক্রম নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব করোনা মহামারি মোকাবিলার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এ নিদানকালে সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি দেশবাসীর কাছে আশার আলো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, তা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশ ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র ৩ শতাংশ ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, যেখানে দেশে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই- শুরু থেকেই দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যা আরও প্রকট রূপ ধারণ করেছে। আমাদের এখানে ভাইরাসটি প্রতিহত করতে গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে অনেক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সৃষ্ট একাধিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হয়েছে, যা দূর করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তৃতি রোধ করতে হবে।
অধিক সংক্রামক করোনার ‘ভারতীয় ধরন’ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী ১ জুলাই থেকে সরকার দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জনগণকে যেমন অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে; তেমনি সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা আনার সব রকম চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে গুণগত মান বজায় রেখে দেশীয় ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকাও আমাদের আশার আলো দেখাতে পারে। বস্তুত হার্ড ইমিউনিটি অর্জন ও করোনার অবসান ঘটাতে দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ বা ১০-১১ কোটি মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়।